সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) অস্থায়ী ভান্ডার থেকে ৫৩৫টি ফ্লু-মিটার (পানির মিটার) গায়েব হয়েছে। মিটারগুলো কোথায় গেল বা কে নিল, কোনো হদিসই মিলছে না। এ ঘটনায় থানায় জিডি দায়ের, তদন্ত কমিটি গঠন ও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব মিটারের প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৫ হাজার ২১০ টাকা। এ হিসেবে ৫৩৫টি মিটারের ক্রয়মূল্য ২৭ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫০ টাকা।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিসিকের কোনো কেন্দ্রীয় ভান্ডার নেই। পরিত্যক্ত তোপখানা পানি শোধনাগার ও কুশিঘাটের কুইটুক পানি শোধনাগারকে অস্থায়ী ভান্ডার হিসেবে ব্যবহার করে সিসিকি। কিন্তু এই অস্থায়ী ভান্ডারের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমনকি সিসিটিভিও নেই।
সূত্র জানায়, তোপখানায় সিসিকের অস্থায়ী ভান্ডারে ১ হাজার ২৮৬টি ফ্লু মিটার মজুত ছিল। সেখান থেকে ২১ মার্চ ৫৩৫টি মিটার স্থানান্তর করা হয় কুইটুকে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কুইটুক থেকে কিছু মিটার আনতে গিয়ে সেখানে কোনো মিটারই পাওয়া যায়নি। এরপর শুরু হয় তোলপাড়।
মিটারের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান গত ১১ আগস্ট শিক্ষাছুটি নিয়ে দুই বছরের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
প্রায় ২৮ লাখ টাকার মিটার গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে নগরীর শাহপরান থানায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর জিডি দায়ের করেছেন সিসিকের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান।
জিডি প্রসঙ্গে শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান সিলেটভিউকে বলেন, ‘মিটার গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সিসিক কর্তৃপক্ষ একটা জিডি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। তবে এখনও কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।’
ওসি জানান, সিসিক কর্তৃপক্ষ মূলত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে জিডি করেছেন। জিডি দায়েরের সময় তারা বলেছেন, ঘটনার বিষয়ে তারা অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেবেন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলেও জানা গেছে। এই কমিটিতে সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খানকে প্রধান করে সদস্য হিসেবে বৈদ্যুতিক ও পরিবহন শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আলম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমানকে রাখা হয়েছে।
তদন্তের বিষয়ে জানতে কমিটির প্রধান মতিউর রহমান খানকে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে তদন্ত কমিটির সদস্য রুহুল আলম বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তবে ডিরেক্ট কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।’
মিটার গায়েবে কারো জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ মিলেছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডিরেক্টলি প্রমাণ নাই, তবে সাসপেক্ট আছে। কিন্তু সন্দেহ এক জিনিস, আর সন্দেহাতীত আরেক জিনিস।’
এই তদন্ত কমিটির মেয়াদ ছিল ৭ কর্মদিবস। কিন্তু এর মধ্যে তারা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে পারেননি। ফলে নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ‘ডিরেক্টলি’ কোনো কিছু না পাওয়ার কথা বলা হলেও, সিসিকের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, মিটার গায়েবের ঘটনায় ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।
এ ঘটনায় সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর, পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান ও সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক তপাদারকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিসিকের স্থায়ী কর্মচারী পাম্প অপারেটর হাসান মাহমুদ মাসুম, সুজেল আহমদ ও লিটন আহমদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আট অস্থায়ী কর্মচারী জহুরুল ইসলাম মোহন, শফিকুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন, আব্দুল হক ইমন, আবদুল্লা আল সোহাগ, প্রশান্ত দাশ শান্ত, জনি চক্রবর্তী, আব্দুল মুতলিব ও আব্দুল মিয়াকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিস পাওয়ার কথা স্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশী আব্দুস সোবহান সিলেটভিউকে বলেন, ‘নোটিস যেহেতু দিছে, সেহেতু জবাব তো দিতে হবে।’
তাঁর কাছ থেকে ওই কর্মচারীদের বরখাস্তের বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানতে চাইলে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা তিনজনকে শোকজ করেছি, থানায় জিডি করেছি, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসাথে কয়েকজনকে বরখাস্তও করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিটারগুলো ওই পাম্পের ভেতরে ছিল। এখন বাউন্ডারি টপকে বাইরে থেকে কেউ আসতে পারে, আবার আমাদের কেউও জড়িত থাকতে পারে। আমরা যেহেতু সরাসরি দেখিনি, সেহেতু এটা তদন্তসাপেক্ষ।’
শেয়ার করুন