সিসিক নির্বাচন: দল গোছাচ্ছে সিলেট মহানগর আ’লীগ

সিলেট

চলতি বছরে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেই মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল গোছাতে চান নেতারা। সে লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বরে তারা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল শুরু করেছিলেন। কিন্তু নানা বিতর্কে সেটি আটকে যায়।পরবর্তীতে কেন্দ্রের দিকনির্দেশনা পেয়েছেন।

এ কারণে এখন সবাইকে নিয়ে দল গোছানোর কাজ শুরু করতে চান নেতারা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে নতুন করে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু করা হবে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ন এ ইউনিটের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি সভাপতি থাকাকালে প্রায় ৭ বছর আগে মহানগর আওয়ামী লীগের অধিভুক্ত ২৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলন করেছিলেন। তখন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বর্তমান সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ।এরপর থেকে আর কোনো সম্মেলন হয়নি।দল গোছানোও হয়নি।

২০১৯ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পান প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক হন অধ্যাপক জাকির হোসেন।পরে তারা মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও গঠন করেন। এরপর করোনা, বন্যাসহ নানা কারণে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলে হাত দেয়া সম্ভব হয়নি।এতে করে তৃণমূলে দলের কাঠামো অগোছালো হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া এই কমিটিগুলো দিয়ে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান দু’দফা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করেন। এবং দু’দফাই ফলাফল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হন তিনি।কামরান যোগ্য প্রার্থী হলেও দলের ভেতরে অনৈক্য, তৃণমূলের নীরবতাসহ নানা কারণে তার পরাজয়ের কারণ বলে দলের নেতারাই মনে করেন।এর ফলে বর্তমান কমিটি নতুন করে তৃণমূলকে সাজাতে গত সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করে।তার আগে গঠন করা হয় ৯টি সাংগঠনিক কমিটি একজন সহ-সভাপতিকে প্রধান করে গঠিত সাংগঠনিক কমিটি তিনটি ওয়ার্ডের সম্মেলন আয়োজন করে।
এদিকে-সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ওয়ার্ড কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নানাভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়ে। পদবঞ্চিত নেতারা বিদ্রোহ করেন। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।এতে করে মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিতর্কের মুখে পড়েন। নগরের ১৮, ৬নং ওয়ার্ডসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন নিয়ে সমালোচনা দেখা দেয়।বিষয়টি গড়ায় কেন্দ্র পর্যন্ত।এ কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গত নভেম্বরে সিলেটে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে।
এসব সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলের কথা শুনেন এবং দলকে শক্তিশালী করতে নির্দেশনা দেয়।
পরে কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা করে।আর ওই সভায় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং সভায় গঠিত উপ-কমিটির নেতাদের কার্যক্রম চলমান রাখাসহ দল গোছানোর দিকে মনোনিবেশ করার তাগিদ দেয়া হয়।তবে-এখনো নতুন করে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু করা হয়নি।

মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন-চলতি বছরের শেষ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। গত এক বছর ধরে তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে- সিনিয়র নেতারা নির্বাচনের আগেই দল গোছাতে চাচ্ছেন। এজন্য তারা ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ফের ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু করতে যাচ্ছেন।
নেতারা জানান- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের অধিভুক্ত ওয়ার্ড হচ্ছে ২৭টি। এরমধ্যে ১০টির সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ করা হয়েছে।মেয়াদোত্তীর্ণ ২৪টির মধ্যে বাকি রয়েছে ১৪টি।বাকি মেয়াদ থাকা তিনটির সম্মেলন হবে কিনা সেটি চূড়ান্ত হয়নি।

তবে-ওই তিন ওয়ার্ডেও সম্মেলনের কার্যক্রম এগিয়ে রাখা হচ্ছে সিলেট মহানগরী এখন আগের চেয়ে অনেক বড়। নতুন করে ১৫টি ওয়ার্ড সৃষ্টি করা হয়েছে।আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন ওয়ার্ডগুলোতেও নির্বাচন হবে।ফলে মহানগর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে নতুন ওই ওয়ার্ডগুলোকে বাদ দেয়া হচ্ছে না। নতুন করে এসব ওয়ার্ডে দল সাজানো চ্যালেঞ্জের।
কারণ-অনেকেই ছিলেন ইউনিয়ন কিংবা উপজেলার রাজনীতিতে। এখন তারা নগরের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।এ কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এসব ওয়ার্ডের নেতাদের বায়োডাটা আহ্বান করা হয়েছে।এরপর নির্বাচনের আগেই এসব ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জানিয়েছেন,ফেব্রুয়ারি থেকে ফের ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু করা হবে। আওয়ামী লীগ বড় দল। কমিটি গঠনে কিছু সমস্যা থাকবে। এসব সমস্যা সমাধান করে সবাইকে নিয়ে আমরা তৃণমূল সাজানোর কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। আর নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের নেতাদের সিভি ইতিমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে।পুরাতনগুলোর সম্মেলনের পাশাপাশি নতুন ওয়ার্ডগুলোর সিভি নিয়ে যাচাই-বাছাই করবো।এরপর আমরা আহ্বায়ক কমিটি দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করবো।

তিনি জানান- সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের পক্ষে মূল ভূমিকা পালন করেন তৃণমূলের নেতারা। এ কারণে তৃণমূলে দল শক্তিশালী হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুবিধা পাবেন। আর তৃণমূল নড়বড়ে হলে প্রার্থীও বেকায়দায় পড়বেন। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা তৃণমূলে দল শক্তিশালী করতে কাজ করছি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *