হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হবিগঞ্জের রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমশই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কমিটি গঠন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলকে গুছিয়ে নেয়ার কাজ করছে। আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে কোনো গ্রুপিং না থাকলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে দু’টি ধারায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আবু জাহির এমপি একক প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন। তার নির্দেশনায় জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
তবে এডভোকেট আবদুল মজিদ খান এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাক্তার মুশফিক হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে দলের একটি অংশ বিভক্ত হয়ে রয়েছেন। তাদের মৌন সমর্থনে রয়েছেন হবিগঞ্জ-৪ আসনের এমপি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আবু জাহির-এর নির্দেশনায়ই জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। দলকে শক্তিশালী করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে। জোরেশোরে চলছে জেলায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড।
সম্প্রতি জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী দলকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয়। তাদের বক্তব্য শক্তিশালী আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো কোনো ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। রাজপথে তারা ছিলেন প্রয়োজনে রাজপথে থাকবেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে চললেও বর্তমানে বিএনপি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপিতে একক প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন সাবেক পদত্যাগী পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জি কে গৌছ। তার নেতৃত্বেই মূলত জেলা বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মী কাজ করছেন। তবে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ডাক্তার আহমদুর রহমান আবদাল ও এনামুল হক সেলিমের নেতৃত্বে অপর একটি গ্রুপ দীর্ঘদিন থেকে আলাদাভাবে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
জেলা বিএনপি’র এ দুই ধারা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। তবে জি.কে. গৌছের নেতৃত্বাধীন অংশেই জেলা বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মী রয়েছেন। তারাই মূলত আন্দোলন-সংগ্রাম ও মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন। দীর্ঘদিন দলীয় কার্যক্রম কিছুটা নিস্ক্রিয় থাকলেও আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল তাদের কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। তাদের মতে, ভয়কে জয় করে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। সরকার পতনের আগ পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন।
তবে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে জেলা জাতীয় পার্টি। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের একের পর এক দল বদলের কারণে এ দলটির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এছাড়া মামলা-হামলার ভয় ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ গঠনের পর জামায়াতে ইসলামী জেলায় তাদের কার্যক্রম অনেকটা গুটিয়ে রেখেছে। বিএনপি’র সঙ্গে তাদের নেতাকর্মীদের একটি অংশ যোগ দিলেও দলীয় ব্যানারে তাদের কোনো কর্মকাণ্ড নেই।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এডভোকেট আবু জাহির জানান, আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। হবিগঞ্জে বিরোধীদলের কোনো ধরনের ক্ষমতা নেই আন্দোলন করার। তারা যদি কোনো ষড়যন্ত্র ও নাশকতার চেষ্টা করে, দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করে তবে কঠোর হাতে দমন করা হবে। তাদের ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাই যথেষ্ট। আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে বলে আমরা মনে করি।
জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জি.কে. গৌছ জানান, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। এ জালিম সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। একসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়ারও পথ পাবে না। সময় এসে গেছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করার। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে গেছে। শিগগিরই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে।
শেয়ার করুন