সিলেটের ছয় উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে ফের টনের্ডোর উৎপত্তি হয়েছে। এ নিয়ে টানা দুদিন টনের্ডোর দেখা মিললো।
রোববার (২৪ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে হাকালুকি হাওরের জুড়ি উপজেলার অংশে এই টনের্ডোর দেখা মেলে। এর আগে শনিবার (২৩ জুলাই) হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলার অংশে চাতলবিল এলাকায় টনের্ডোর উৎপত্তি হয়।
তাতে হাকালুকির তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। অনেকে ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেন।
টনের্ডো উৎপত্তির বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রোববার বিকেলে জাপানের কাইটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রফেসর ড. শি থাইচি হায়াসি ও মাসাশি সাকামতো এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী হাকালুকি হাওর পরিদর্শনে যান। সেসময় তারা দেখতে পান আবারো টনের্ডো সৃষ্টি হয়েছে। তবে এর পানির স্তম্ভ ছিল খুবই চিকন। আগের দিনের চেয়ে অধিকন্তু দুর্বল ছিল সেটি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, জাপানের দু’জন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ নিয়ে হাকালুকি হাওরে টনের্ডোস্থল পরিদর্শনে গেলে ওইদিন আবারো টনের্ডো উৎপত্তি চোখে পড়ে। অবশ্য সেটি দুর্বল ছিল।
তিনি বলেন, আমরা অনেকটা দূর থেকে টনের্ডোস্থল দেখেছি। সেখানে বাতাসের ইউং ছিল কম। ভ্যাপসা গরম ছিল এবং বাতাসের ঘুর্ণয়ন গতি যে পানি উপরে টেনে তোলে আবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায়।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, শুধুমাত্র জলভাগে টনের্ডো তেমন ক্ষতি করতে পারে না। তবে এর ব্যপ্তি ১০/১২ কিলোমিটার হতে পারে। ঘুর্ণয়ন গতিসীমায় যা পড়বে, তা উপরে তুলে নেবে। ওইস্থানে আকাশে কালো মেঘ জমে বিজলী চমকায় এবং বিকট শব্দে গর্জন হয়। তবে লম্বা পিলার আকারের স্তম্ভের নীচে মাটি-পানির সংস্পর্শে থাকলে সেটি প্রলয়ঙ্করী রূপ ধারণ করে সব কিছু মাটিতে মিশিয়ে দেয়। সাধারণত প্রলয়ঙ্করী টনের্ডোর গতিসীমা ২০০ কিলোমিটার বা তারও অধিক হতে পারে। এর আগে নেত্রকোনায়ও টনের্ডোর সৃষ্টি হয়েছিল। সেটির ব্যপ্তি ছিল ১২ কিলোমিটার জুড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ধরনের টর্নেডো পানি টেনে নিয়ে ওপরে তুলে মেঘ তৈরি করে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। পানির সঙ্গে ঘুর্ণয়মান গতিতে মাছও উপরে উঠে যায়। পরে সেটাই আবার বৃষ্টির সঙ্গে পড়তে দেখা যায়।
তাদের ধারণা, ভূপৃষ্টে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হাওরের পানির ওপরের তাপমাত্রা কমে উপরে উঠে যাওয়ার কারণে সেখানে টর্নেডোর সৃষ্টি হয়। ওই সময় আশেপাশের শীতল হাওয়া সেই শূন্যতা পূরণ করতে আসায় একটি ঘূর্ণির তৈরি হয়। এভাবে টর্নেডো তৈরি হয়। টর্নেডোর কারণে পানির ঘুর্ণিপাক সৃষ্টি হয় এবং স্তম্ভ বা পিলারের মতো আকাশে তুলে নেয়। যদিও হাওরাঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা সচরাচর দেখা মেলে না।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার হাকালুকির তীরবর্তী ঘিলাছড়ার বাসিন্দা মাছুম আহমদ বলেন, শনিবার সৃষ্ট টনের্ডো হাকালুকির পানি শোষণ করে আকাশে পানির পিলারের স্তম্ভ তৈরী করে। এটি এলাকার মানুষের মনে ভয় ধরিয়েছে। অনেকে এটাকে আলৌকিক কিছু বলে আখ্যায়িত করেছেন। এরপর থেকে হাওরের পানির দিকে সবার নজর থাকে। রোববার বিকেলেও ফের টনের্ডো সৃষ্টি হয়েছে। সেই পানির পিলারের স্তম্ভ আগের দিনের চেয়ে অনেক সরু ছিল। সেটি হাকালুকির পূর্বপার জুড়ি উপজেলা এরিয়াতে হয়েছে। আমরা সেটির ভিডিও ও ছবি ধারণ করি।
এর আগে শনিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলা অংশের চাতলার পাড় বা চাতল বিল এলাকায় টনের্ডোর দেখা মেলে। ওই সময় হাকালুকির পানি জোয়ারের ন্যায় জলস্তম্ভটি টেনে আকাশে তুলে। আকাশ কালচে বর্ণ ধারণ করে বিজলী চমকে গর্জন করতে থাকে। জল আর আকাশে পানির পিলারের তৈরী হওয়া স্তম্ভ দেখতে হাকালুকির তীরবর্তী লোকজন কৌতুহল ভরে দেখতে থাকেন। সেটি বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী ছিল। তখন আকাশ কালো মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। হাওরে নৌকা নিয়ে থাকা অনেকে সেটি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তীরে চলে আসেন। তবে রোববার সৃষ্ট টনের্ডো আগের দিনের চেয়ে দুর্বল এবং জলস্তম্ভটি অনেকটা সরু আকারের ছিল।
শেয়ার করুন