১ ঘণ্টায় ছাই হয়ে গেছে প্রায় আড়াই বছরের স্বপ্ন

সুনামগঞ্জ

টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক বহনের জন্য নির্মিত হাউজ বোট ঝঙ্গ সুরমা নদীতে সাহেব বাড়ি ঘাট এলাকায় আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। পুড়ে যাওয়া বোট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আবেগময় লেখা দিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা বোট মালিক পরাগ আহমেদ।

নিজের দুই বছরের স্বপ্ন সাধনা তুলে ধরার পাশাপাশি বোটটি পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেছেন তিনি।

পাঠকদের সুবিধার্থে লেখাটি তুলে ধরা হলো-

শত্রু আমি নই, শত্রুতা ঝঙ্গের সঙ্গে। যার সঙ্গে আমি স্বপ্ন শেয়ার করেছি, চা খেয়েছি সে হয়তো চা খেতে খেতে আমার ক্ষতির প্রস্তুতি নিয়েছে। আমি শুধু একটি হাউজবোট বানিয়ে বা ব্যবসা করবো ভেবেই হাওরে আসিনি। আমি চেয়েছিলাম হাজার বছরের পুরোনো হারিয়ে যাওয়া পালতোলা মালারবোট নতুন করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে আনতে। কিন্তু পারিনি, নিখুঁত একটা প্লানিং করে আমার হাউজবোট ঝঙ্গ – JhongGo – পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিষ্ঠুর কিছু মানুষের হিংসাত্মক দৃষ্টি থেকে মুক্তি পায়নি ঝঙ্গ। মাত্র এক ঘণ্টায় ছাই হয়ে গিয়েছে আমার প্রায় আড়াই বছরের স্বপ্ন, পরিশ্রম, সাহস ও উৎসাহ। হয়তো আর কোনোদিন এমন বড় পরিসরে কিছু করার সাহস আমি পাব না- শত্রুরা এটাই চেয়েছিল। আইনি জটিলতার মারপ্যাঁচে ৪-৫ দিন চলে গেল। যা বুঝলাম তা না হয় না-ই  প্রকাশ করলাম। কিন্তু স্বপ্ন পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা বা ক্ষত শেষ হবার নয়। আইনের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে তেমন নিজের প্রতিও আত্মবিশ্বাস। ঝঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়া দোষীদের আইনের আশ্রয় নিয়ে খুঁজে বের করা হচ্ছে। আমি তোমাদের বের করেই ছাড়ব এবং এর কঠিন শাস্তি তোমরা পাবে ইনশাআল্লাহ।

এ বিষয়ে পরাগ আহমেদ বলেন, ঝঙ্গ শুধু একটা বোট না এটি হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। ঝঙ্গ একটি মালাকার বোট যা প্রায় দু থেকে তিনশত বছর আগের মডেলের তৈরি। মালাকার বোট সুনামগঞ্জে এই প্রথম  আর বাংলাদেশে দ্বিতীয়। আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে এটি নির্মাণ করতে। এটি শুধু আমার ব্যবসা না সুনামগঞ্জের সম্পদ ছিল। যার মাধ্যমে বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়াতে পারতাম। একটি মহল চায়নি ঝঙ্গ টাঙ্গুয়ার হাওর দাঁপিয়ে বেড়াক তাই পরিকল্পিতভাবে ঝঙ্গকে পুড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার বোটে সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। আগুন ধরেছে বিকেলে।ভেতরে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বা আগুন ধরার মতো কিছু ছিলো না।জেনেরেটর ছিল একদম পেছনে, আগুনের সূত্রপাত সামনে থেকে। যখন আগুন ধরে আমার বোটের দায়িত্বে থাকা দুজন স্টাফ যাদের বাড়ি ঘাটের পাশেই তারা কোথায় ছিলেন এবং ধরার পরও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি কেন তার কোনো উত্তর আমার জানা নেই। আগুন ধরার পর সেটিকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আরও বেশি পোড়ানো হয়েছে। ঘাটে বেঁধে রাখলে হয়তো ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভাতে পারতো।বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে আমি মনে করছি এই অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত। আমি মামলা করতে চাচ্ছি। পুলিশ জিডি নিয়েছে, তদন্ত শেষে হয়তো মামলা নেবে। আমি চাই দোষীদের খুঁজে বের করা হউক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *