৭ তারিখ সকলে সকাল সকাল ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়

আগামী ৭ জানুয়ারি সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে হাজির হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোটটা নৌকায় দেওয়ার অনুরোধ করে বলেছেন, ‘এই মার্কাই দেশের উন্নতির সোপান।’

শুক্রবার বিকেলে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নির্বাচনি জনসভায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানাও।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির সশরীরে তৃতীয় জনসভা। ২০ ডিসেম্বর সিলেটে প্রথম, ২৬ ডিসেম্বর রংপুরে দুটি পথসভা ও একটি জনসভায় অংশ নেন। এছাড়া বেশ কিছু জেলায় জনসভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন তিনি।

বরিশালের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এই বিভাগের ২১টি আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর তার সরকারের আমলে এই অঞ্চলে ‍উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। সেই সঙ্গে ভোট বর্জনকারী বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শুরু করেন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে, কথা বলেন মিনিট তিরিশেক।

বিএনপির বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “এ দল হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং এবং যত প্রকার অপকর্ম, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী। তার সঙ্গে জোটছে যুদ্ধাপরাধী (জামায়াত) দল। এরা নির্বাচন চায় না। বানচাল করতে চায়।

“আপনাদের কাছে আহ্বান, আপনারা ৭ তারিখ সকলে সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যাবেন।”

‘মার্কাটা কী?’ এই প্রশ্ন রেখে নিজেই জবাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “নৌকা মার্কা। এই নৌকা হচ্ছে নুহ (আ.) এর নৌকা। এই নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছিল, এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, এই নৌকায় ভোট দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। নৌকায় ভোট দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।”

তরুণদের ভোট নৌকায় পড়বে বলেও বিশ্বাস করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি। নতুন ভোটারদের কাছে আমার আহ্বান, যারা প্রথমবার ভোট দিতে আসবেন নিশ্চয় চাইবেন না যে আপনার ভোট ব্যর্থ হোক। কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।”

গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার ওপরও গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা। বলেন, এই ধারা অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে।

“যখন জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ছিল, তখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়নি, বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ আসলে দেশ এগিয়ে যায়। কাজেই এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।”

বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট’

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্লোগান ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গও উঠে আসে শেখ হাসিনার ভাষণে।

তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের ছেলে, মেয়েরা সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে, আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিখবে, দক্ষ জনশক্তি হবে। আমাদের সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্মার্ট হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট হবে, সমাজ ব্যবস্থা স্মার্ট হবে।”

ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনো দেশ কখনো উন্নতি করতে পারে না।

“আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে চাই যাতে বিশ্বের সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম চলতে পারে।”

উন্নয়নের বর্ণনা ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকার

শেখ হাসিনা বলেন, “অবহেলিত বরিশাল আজ কোথায় আছে? বরিশাল কি উন্নত হয়েছে?

“বরিশাল বিভাগে নৌবাহিনীর ঘাঁটি করেছি, সেনানিবাস করেছি, এলাকার উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, সেখানে সোলার প্যানেল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি।

“ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় নিচ্ছি। ভবিষ্যতে বরিশালেও নিয়ে আসব যাতে আরো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।”

তৃতীয় সাবমেরিন কেবল কুয়াকাটায় চলে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ইন্টারনেট সেবা নির্বিঘ্ন করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বরিশাল ছিল শস্য ভাণ্ডার। আবারো সেই পরিচয় ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য খাদ্য সংরক্ষণাগার করে দিয়েছি।

“এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, মেরিন একাডেমি করে দিয়েছি, বরিশাল একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব।”

প্রতিটি নদীর ওপর সেতু করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা এবং পায়রা বন্দর পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা তৈরির অঙ্গীকারও করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বরিশাল ছিল অন্ধকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে এখন প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলছে। কথা দিয়েছিলাম কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না, কথা রেখেছি।

“আমরা দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, এখন দিন বদলে গেছে। দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ২৫.১ ভাগ ছিল, তা ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশে হতদরিদ্র থাকবে না।”

বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যখন জনগণের জন্য উন্নয়ন করি, বিএনপি জামায়াত করে অগ্নি সংযোগ। রেললাইনে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ মারার ফাঁদ পাতে।

“মা আর সন্তানকে একসঙ্গে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। এই দৃশ্য বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ২০০১ সালে শুরু করেছিল। এরপর ২০১৩ ও ১৪ সালে করে আবার শুরু করেছে। আমি ধিক্কার জানাই ওই বিএনপি-জামায়াতকে।”

বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “এই সন্ত্রাসী দলের রাজনীতি করার কোনো অধিকার বাংলাদেশে নেই। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে আর ওদের রাজনীতি মানুষ পোড়ানোতে।”

জামায়াতের বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তাদের (বিএনপি) দোসর কে? যারা একাত্তরের গণহত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, ধর্ষণ করেছে, মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। যাদের বিচার করেছি, সাজা দিয়েছি সেই যুদ্ধাপরাধীরা হচ্ছে তাদের (বিএনপি) দোসর।”

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে দেশকে ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির অভয়ারণ্য’ করেছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই সময় ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে অন্ধকার যুগ।”

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কারচুপি করে হারানোর অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এরপর যে অত্যাচার শুরু হল! এই বরিশাল থেকে ২৫ হাজার মানুষ আমার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল।

“বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস মানে হাত কাটা, পা কাটা, চোখ তোলা, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হাড় গুড়া করে মারা, ঘরবাড়ি দখল করা, মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করা; ফাহিমা-মহিমা কত মানুষ আত্মহত্যা করেছে!

“২০০১ থেকে ২০০৬ ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে অন্ধকার যুগ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও বিএনপি ক্ষমতায় থেকে তাদের ভাগ্য গড়েছিল।”

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *