সুস্থ ও উন্নত জাতি গঠনের জন্য নারীদের শিক্ষিত করা প্রয়োজন: অ্যাড. নাসির খান

সিলেট

সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেছেন, ‘কেবল চাকরির জন্য নয়; সুন্দর-সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ এবং একটি সুস্থ ও উন্নত জাতি গঠনের জন্য নারীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা, দারিদ্র শান্তিময় সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। কিন্তু, নারীদের পিছিয়ে রেখে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়।’
তিনি বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের নাইওরপুলস্থ রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে চার দিনব্যাপী উৎসবের তৃতীয় দিনের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
রামকৃষ্ণদেবের ১৮৮তম আবির্ভাব ও বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

দিবাকর ধর রামের সভাপতিত্বে নারী ‘জাগরণে শ্রীমা সারদা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম পরিচালনা কমিটির সম্পাদক, অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, কুমিল্লার অযাচক আশ্রমের অধ্যক্ষ ডা. যুগল ব্রহ্মণচারী। মূখ্য আলোচক ছিলেন মদন মোহন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সর্বাণী অর্জুন। আলোচক ছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীমা চৌধুরী, এমসি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পান্না বসু ও সহকারী অধ্যাপক মনিকা রানী বনিক। ধন্যবাদ বক্তব্য দেন, সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সদস্য, সনতু দাস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, ভাস্বতী দে বহ্নি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাসির উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজ পুরুষ শাসিত সমাজ। তারা নারীদের এগিয়ে যেতে দেন না। এক সময় নারীরা অনেক পিছিয়ে ছিল। দিন দিন পরিবর্তন ঘটছে, নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।’
নারীদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও সমাজের উন্নতি সাধনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সারদা দেবী ভারতবর্ষে নারী জাগরণের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তার দর্শন এখনও প্রাসঙ্গিক। তাঁকে অনুসরণ করে আমাদের নারীরাও এগিয়ে যেতে পারেন।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. যুগল ব্রহ্মচারী বলেন, ‘প্রকৃত মানুষ সৃষ্টিই জাতির জাগরণের চিহ্ন। উচ্চ আদর্শের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার ক্ষমতাই পূর্ণতা। পূর্ণ মানব সৃষ্টি না হলে একটি জাতি কখনো জেগে ওঠেছে বলা যায় না। একইভাবে নারীকে বাদ দিয়ে জাতির জাগরণ সম্ভব নয়। সারদা দেবী নারী জাতিকে জাগিয়ে তোলার পথপ্রদর্শণ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সারদা দেবীর সন্যাসি ছিলেন, সংসারিও ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী এবং নির্লুভ ব্যক্তিত্বের অধিকারি। সবাইকে আপন করতে শিখিয়েছেন, ত্যাগের অনুশীলন দেখিয়েছেন। তাকে অনুসরণ করা গেলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। তাই, তাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে, সম্মান করতে শিখতে হবে। তবেই আমাদের আলোচনা স্বার্থক হবে।’

মূখ্য আলোচকের বক্তব্যে সর্বাণী অর্জুন বলেন, ‘প্রযুক্তিগত সময়ে আমরা একটি অস্থির যুব সমাজ দেখছি। শারদা দেবীর জীবন অনুসরণ পারিবার থেকে সমাজ ও জাতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।’ এজন্য তিনি নারীদের যুগোপযোগী শিক্ষা অর্জনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘শ্রীমা সারদাকে নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। যুগের বিচারে তিনি যে কতটা আধুনিক, কতটা প্রাসঙ্গিক তা জানা উচিত। তার কাছ থেকে আমাদের, সমাজের পরিবারের শেখার অনেক কিছু আছে।’
আলোচনা সভা শেষে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সঙ্গিত পরিবেশন করেন, শোভা ভৌমিক, প্রণতি ভট্টাচার্য্য, প্রভাতী দাস দুলু, সুমনা আজিজ, মুন্নাজয়া দাম, প্রিয়াঙ্কা ভৌমিক, সুদীপ্তা পাল শিউলী ও জয়ীতা তালুকদার তিথি।

এর আগে সকাল ১১টায় প্রদীপ দে’র পরিচালনায় কালীকীর্তনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় বাহুবলের কবি রত্ন মনি নাথ কৃষ্ণালের পরিবেশনায় পদাবলী কীর্তন, বিকেল ৪টায় গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেন সিলেটের শ্রীমা সারদা সংঘের সদস্যরা। আলোচনায় বক্তারা  নারী সমাজকে সারদা দেবীর জীবনাচারণ অনুসরণের আহ্বান জানান।

গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী উৎসব শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *