লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে

জাতীয়

দেশজুড়ে আবারো বেড়েছে লোডশেডিং। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আজকালের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। যদিও কয়লা সংকটে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। বড় সমতার এ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে এবং চলমান তাপপ্রবাহে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়তে থাকলে ৩ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বর্তমানে দৈনিক ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হচ্ছে। বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন দিনের বেলায় সর্বোচ্চ বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৩৪৯ মেগাওয়াট আর রাতে সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৩৩৪ মেগাওয়াট। গতকাল বিদ্যুৎ চাহিদার পূর্বাভাসে দেখানো হয় দিনে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট আর রাতে ১৪ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট।

চাহিদা অনুযায়ী বিপিডিবির এ পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চাহিদা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপিডিবির তথ্যে খুব বেশি তারতম্য দেখা যাচ্ছে না। তবে সারা দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পিজিসিবি বলছে, বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনে বর্তমানে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। সংস্থাটি মূলত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করে।
পিজিসিবির ঘণ্টাপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও লোডশেডিংয়ের চিত্র থেকে জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল আড়াই হাজার মেগাওয়াটের ওপরে। এরপর দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় গড়ে লোডশেডিং হয় প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। গত ২৯ মের পর থেকে লোডশেডিং দিনে ও রাতে সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত হচ্ছে।

দেশে আকস্মিকভাবে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দুটি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন বিপিডিবি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়া এবং বৃহৎ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সংকটের পাশাপাশি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কয়লা সংকটের কারণে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পটুয়াখালীর পায়রার ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) বন্ধ রয়েছে। বাকি ইউনিটটি আজ অথবা কালকের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হলে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বিদ্যমান ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে।

লোডশেডিং পরিস্থিতির বিষয়ে বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, ‘লোডশেডিং কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়টি নিয়ে আমরা সার্বণিক কাজ করছি। মনিটরিং কার্যক্রম সার্বণিক চলমান।’
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘পায়রার বিকল্প হিসেবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বিশেষত পায়রায় ২২৫ মেগাওয়াট, ইউনাইটেড ১০০ মেগাওয়াট এবং বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ারের ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় সমতার আরো কয়েকটি কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।’

দেশে বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন সমতা রয়েছে ২৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ বাদে)। আর বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হচ্ছে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ৯ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো সমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এসব সমতার বেশির ভাগই জ্বালানি সংকটে বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়মিত মেরামতে থাকায় সেগুলোও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

গতকালের তথ্যানুযায়ী পিজিসিবি সূত্রে জানা যায়, দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চাহিদা তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে গ্যাস থেকে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট, তরলীকৃত জ্বালানি (তেলভিত্তিক) থেকে ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ২ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট, সৌর ও পানিবিদ্যুৎ থেকে প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট এবং বাকিটা ভারত থেকে আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় মফস্বলে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা, ফরিদপুর, বাগেরহাট অঞ্চলে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার গ্রাহকরা।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সংকটকে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মূলত কয়লার বিল বকেয়ার কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিপুল অংকের বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহে অর্থায়ন বন্ধ করে চীনা কোম্পানি সিএমসি। এ পরিস্থিতিতে এক মাস ধরে কয়লা আমদানির বিষয়ে কোনো সুরাহা করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। সর্বশেষ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১ জুন এলসি (ঋণপত্র) খুলেছে সিএমসি। নতুন এ এলসিতে চার লাখ টন কয়লা আসবে দেশে। ইন্দোনেশিয়া থেকে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা আসতে সময় লাগবে ২০-২৫ দিনের মতো। এ কয়লা আসার পর পুনরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে যেতে পারবে।

বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়লা আমদানি কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে সিএমসি। এ কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে বিসিপিসিএল, বিপিডিবি, বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সব তরফ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *