কয়েক দিন থেকেই সিলেটে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এরই মধ্যে রোববার বৃষ্টির প্রকোপ আরো বেড়েছে। ওইদিন সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সিলেটে ১৫২.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার একই সময়ে সিলেটে ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিলো। এই বৃষ্টি আরো অন্তত ৫ দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃষ্টির কারণে নদনদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সিলেটে কোথাও নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
গত দুদিনের মতো রোববার সকাল থেকেই সিলেটে মুষলধারারে বৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে বৃষ্টির প্রকোপ। ভারি বর্ষণে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এমনকি পানি ঢুকে যায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও।
হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনে পানি ঢুকলেও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়নি বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে রোগীদের যাতায়াতে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
ঈদের পর আজ রোববার প্রথম কর্মদিবস থাকায় সকাল বেলা অনেককেই বৃষ্টিতে ভিজে অফিসে আসতে দেখা গেছে।
রোববার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে অবিরত বৃষ্টির কারণে সিলেট নগরীর ষ্টেশন রোড, বঙ্গবীর রোড, লাউয়াই, রেলগেইট, তালতলা, দাড়িয়াপাড়া, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, কাজলশাহ, ওসমানী মেডিকেল, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, যতরপুর ও ছড়ারপাড়সহ বেশ কিছু এলাকার সড়ক ও অনেক এলাকার বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।
অনেক এলাকায় সড়কে হাঁটুর সমান পানি জমতে দেখা গেছে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়েছে পানি। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনামিশ্রিত পানিও ঢুকে পড়েছে অনেকের বাসা-বাড়ি- দোকানপাটে।
সড়কে হাঁটু পানি থাকায় যাতায়াত করতে পারছেন না পথচারীরা। এছাড়াও যান চলাচলেও বাঁধা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় যানবাহন বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন জানান, রোববার সকাল ৬ থেকে সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত সিলেটে ১৫২.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ৫ দিন সিলেটে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি ও ঢলের কারণে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। তবে পানি এখন পর্যন্ত বিপদসীমার নীচে রয়েছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানান, ‘হাসপাতালের পিছনের নালা উপচে হু হু করে পানি ঢুকছে। মেডিকেল কলেজের নিচতলা পুরোটাতেই পানি ঢুকেছে। একেকটি কক্ষে হাটুসমান পানি।’
তিনি বলেন- ‘গত বছর বন্যার সময় পানি ঢুকতে দেখে সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্টরা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতেন তবে এবারও এমন পরিস্থিতি হতো না। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সকল ভবনে পানি আরও বাড়বে। তখন হয়তো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক নাও থাকতে পারে।’
জলাবদ্ধতার ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আজকে সিলেটে মাত্র তিন ঘন্টায় ১০০ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টি হয়েছে। এই পরিমাণ বৃষ্টির পানি নামতে একটু সময় লাগে। তাই সামান্য সময়ের জন্য কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। তবে বৃষ্টি থামার পর পানি নেমে গেছে।
শেয়ার করুন