‘ভূ-রাজনৈতিক চাপে বাংলাদেশ’

জাতীয়

বাংলাদেশ নানা কারণে বর্তমানে ভূ-রাজনৈতিক (জিও পলিটিক্যাল) চাপে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। 

তিনি বলেছেন, এই চাপ যৌক্তিক নয়। কারণ আমার দেশ কীভাবে চলবে, সে ভাবনা আমাদের। আপনাদের দেশের বিভিন্ন পলিসি নিয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করতে যাই না। কিন্তু আপনারা কেন?

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির নিজস্ব কার্যালয়ে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন, মো. আবদুল হালিম, নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ রেজাউল করিম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) খায়রুল বাশার আবু তাহের, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান এবং ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুদ্দিন।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া বাংলাদেশের ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্র হওয়া সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য এখন বিনিয়োগ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিনিয়োগ এখন বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। আমাদের দেশে এখন বিনিয়োগের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। বিনিয়োগের প্রস্তাব আছে। কিন্তু ভূরাজনৈতিক চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জিও পলিটিক্যাল বিষয়টি সামনে আছে। কেন এই চাপ তা অনেকেই জানেন। কিন্তু এই চাপ যৌক্তিক নয়।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি সবক্ষেত্রেই উন্নয়নকে আরও বেগবান করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য আমাদের কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং দরকার ছিল। আমরা বিভিন্ন দেশে রোডশো করে এটাই করতে চেষ্টা করেছি। এটা বিএসইসির দায়িত্ব না হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেশের স্বার্থে করেছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সাড়াও পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী কীভাবে আসবে? তারা ভাবে আমরা গরিব, মূর্খ, সাইক্লোন আক্রান্ত। তাহলে কেন বিদেশিরা এদেশে বিনিয়োগ করবে? তাদের এই ভুল ধারণা ভাঙানোর জন্যই আমরা কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং করেছি। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগ সপ্তাহে তাই বিশ্বাস করতে হবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আরও স্মার্ট হতে হবে।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আমাদের দেশে এখন বিনিয়োগের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। আমার সঙ্গে এরই মধ্যে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছেও ১৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে। নির্বাচনের পরেই কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ের সুফল আসবে। তিনি আরও বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনের পরে দেশে বড় বড় বেশ কিছু বিনিয়োগ আসবে।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে পরিকল্পনা হয় পাঁচ বছর মেয়াদি।

পাকিস্তান ও ভারতেও পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধুও পাঁচ বছরের এই পরিকল্পনাকেই গুরুত্ব দিতেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনলেন ২০ বছরের স্ট্র্যাটেজি প্ল্যান। যা ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত করা।

ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ সপ্তাহে এমন বেশ কিছু আয়োজন রয়েছে যার মাঝে মানুষ এবং বিনিয়োগকারীরা অনেক কিছু জানতে পারবে এবং শিখতে পারবে। কিভাবে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহী এবং ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্যও থাকবে বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসসিও) সদস্যগুলো প্রতি বছর অক্টোবর মাসে বিশ্ববিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করে। সংগঠন সদস্য হওয়ার পর বিএসইসিও ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালন করে আসছে। এর উদ্দেশ্য হলো-সদস্য দেশগুলো তাদের নিজ দেশের বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা তৈরি এবং বিনিয়োগ শিক্ষা বাড়ানো। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘ইনভেস্টরস রেজিলিয়ন্স’ বা কঠিন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের টিকে থাকা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *