মাধ্যমিকে ৭৬, প্রাথমিকে ৬০ দিন ছুটি, শিক্ষকদের অসন্তোষ

শিক্ষা

সাধারণত প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বাৎসরিক ছুটি একই হয়ে থাকে। কিন্তু ২০২৪ সালের তালিকায় সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে মাধ্যমিকে রাখা হয়েছে ৭৬ দিন ও প্রাথমিকে রাখা হয়েছে ৬০ দিন। মূলত রমজান ও ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন এবং দুর্গাপূজার ছুটি মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিকে কিছুটা কমানো হয়েছে। এতে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষকরা বলছেন, প্রাথমিকে ৬০ দিনের বাৎসরিক ছুটি মানে এ দিনগুলো যে আমাদের কাজ বন্ধ থাকে তা কিন্তু নয়। কারণ দিবসভিত্তিক যেসব ছুটি রয়েছে, সেসব দিনে আমাদের স্কুলে আসতে হয়। অন্যান্য ছুটির সময় প্রশিক্ষণ, খাতা দেখা ও সরকারি নানা কর্মসূচিতে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া একই অভিভাবকের এক সন্তান মাধ্যমিকে পড়ে, আরেক সন্তান প্রাথমিকে পড়ে। এতে ছুটির ভিন্নতা হলে ওই অভিভাবককে সমস্যায় পড়তে হবে। আবার মাধ্যমিক সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। একই শিক্ষক প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ক্লাস নেন। তাহলে কি তারা মাধ্যমিক ছুটি দিয়ে প্রাথমিক খোলা রাখবে? অথচ বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই বেশি ছুটি থাকার কথা।

সূত্র জানায়, চলতি বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। এ বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এ নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায়ও বাৎসরিক ছুটি ৭৬ দিন রাখার কথা বলা হয়েছে। আর সাপ্তাহিক ছুটি হবে দুদিন। অর্থাৎ বছরে মোট সাপ্তাহিক ছুটি ১০৪ ও বার্ষিক ছুটি ৭৬ দিন মিলে মোট ছুটি দাঁড়াবে ১৮০ দিন। আর কর্মদিবস হিসেবে ১৮৫ দিন রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে পাঁচটি জাতীয় দিবসকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মদিবস হিসেবে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা একটি রূপরেখা দিলেও শিক্ষক্রম বাস্তবায়ন করবে নিজ নিজ অধিদপ্তর। আমরা বাৎসরিক ছুটি ৭৬ দিন রেখেছি। এখন এর বেশি ছুটি দিলে সমস্যা। তবে ছুটি যদি কম রাখে তাহলে তো ক্ষতি নেই।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে বাৎসরিক ছুটি সর্বোচ্চ ৭৬ দিন রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এর বেশি ছুটি দেওয়া যাবে না, কম রাখলে সমস্যা নেই। এখন শিক্ষার ভিতটা তো প্রাথমিক থেকে শিখে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিকে যায়। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের হাতে ধরে শিখাতে হয়। ফলে আমাদের শিখন ঘণ্টা বেশি দরকার হয়। আর তা ১৮৫ কর্মদিবসে সম্ভব নয়। এজন্যই মাধ্যমিকে বেশি ছুটি রাখলেও আমরা কিছুটা কম রেখেছি।’

শাহ্ রেজওয়ান হায়াত আরও বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এখনো আগামী বছরের ছুটির তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড় করা হয়নি। আমরা ছুটির তালিকা নিয়ে আবারও বসব, পুনর্মূল্যায়ন করব। তারপরই তা ছাড় করা হবে।’

ছুটির তালিকা থেকে জানা যায়, মাধ্যমিকে পবিত্র রমজান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, শুভ দোলযাত্রা, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, জুমাতুল-বিদা, শবেকদর, ঈদুল ফিতর, বৈসাবি এবং নববর্ষের ছুটি মাধ্যমিকে রাখা হয়েছে ২৯ দিন আর প্রাথমিকে রাখা হয়েছে ২১ দিন। পবিত্র ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি মাধ্যমিকে দেওয়া হয়েছে ১৪ দিন, প্রাথমিকে দেওয়া হয়েছে ৭ দিন। দুর্গাপূজা, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, লক্ষ্মীপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমার ছুটি মাধ্যমিকে রাখা হয়েছে ৭ দিন, প্রাথমিকে রাখা হয়েছে ৫ দিন। অন্যদিকে প্রাথমিকে শুভ মহালয়ার জন্য এক দিন ছুটি রাখা হলেও মাধ্যমিকে তা রাখা হয়নি। এতে মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিকে ১৬ দিন ছুটি কম রাখা হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ছুটি নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বড়দের ছুটি ৭৬ দিন হলেও  কোমলমতিদের ক্ষেত্রে ৬০ দিন ছুটি রাখা হয়েছে। আমার মনে হয়, শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের ছুটির বর্ষপঞ্জিকা করলে তা অভিন্ন হতো। তাই আমরা প্রাথমিকের ছুটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *