অর্থনৈতিক সংকটে সিয়েরা লিওন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিহত ২৭

জাতীয়

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। খবর রয়টার্স।

অর্থনৈতিক দুর্দশা ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বুধবার (১০ আগস্ট) রাজধানী ফ্রিটাউনের রাজপথে বিক্ষোভ শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। সংঘর্ষে পুলিশের ছয়জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। এছাড়াও বিক্ষোভে অন্তত ২১ জন বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে।

সিয়েরা লিওনের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, রাজধানী ফ্রিটাউনের সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এছাড়া উত্তরাঞ্চলীয় শহর কামাকুইয়ে তিনজন ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মাকেনিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

সিয়েরা লিওনে এমন সরকারবিরোধী বিক্ষোভের নজির নেই। বিশেষ করে রাজধানী ফ্রিটাউনে সাধারণত বিক্ষোভ সমাবেশ দেখা যায় না। তবে গত কয়েক বছরে বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে।

বিক্ষোভের একটি ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, ফ্রিটাউনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুঁড়ছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

রাজধানী ফ্রিটাউনসহ অন্তত তিনটি শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১০ আগস্ট) রক্তক্ষয়ী ওই বিক্ষোভের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কারফিউ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী সুলাইমান তুরে (১৯) নামে একজন বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। তবে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের সময় তিনি মিছিলে ছিলেন না। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সবাই হতবাক। আমাদের দেশ এমন না। সিয়েরা লিওন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ।

সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাজধানী ফ্রিটাউন এবং দেশের অন্যান্য শহরে মানুষজন প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বিয়োর পদত্যাগের দাবি তোলে। এসব বিক্ষোভে স্লোগান ছিল -‘বিয়ো মাস্ট গো’ অর্থাৎ (প্রেসিডেন্ট) বিয়োকে সরতে হবেই।

এছাড়া সরকারের মধ্যে দুর্নীতি এবং পুলিশের বাড়াবাড়ি নিয়ে অনেক দিন ধরেই মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিল। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির জেরে সেই ক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, সিয়েরা লিওনের ৮০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে।

জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট বিয়ো তার পরিবার নিয়ে এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সরকারের দায়িত্ব এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহামেদ জুলদে জাল্লোর ওপর। তিনিই বুধবার (১০ আগস্ট) দেশ জুড়ে কারফিউ জারি করেন।

বুধবার (১০ আগস্ট) সিয়েরা লিওনের সরকার বলেছিল, অর্থনৈতিক সংকট ও অন্যান্য সমস্যার প্রতিবাদে দেশের হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ থেকে রাস্তায় ঢিল ছুঁড়েছেন এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়েছেন। সেসময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রাথমিকভাবে এই বিষয়ে কোনও পরিসংখ্যান জানায়নি দেশটির সরকার।

বুধবারের (১০ আগস্ট) এই রক্তপাতের পর বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাজধানী ফ্রিটাউন শান্ত রয়েছে। আবারও সহিংসতা শুরু হওয়ার আশঙ্কায় রাজধানীর বাসিন্দারা ঘরের বাইরে বের হননি কেও। সেখানকার দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বিয়ো বলেছেন, বুধবারের (১০ আগস্ট) ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা তদন্ত করা হবে। 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *