সিলেটে ঠিকানায় ফিরছে হকার

সিলেট

সিলেট নগরীর ফুটপাত ও সড়ক দীর্ঘদিন ধরেই হকারদের দখলে। এতে প্রতিদিনই যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অতীতে বহুবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে, অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসিতও করা হয়েছে, কিন্তু ফের সড়ক ও ফুটপাতে ফিরে এসেছেন হকাররা। তবে এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন। লালদিঘীরপাড়ে অস্থায়ী মার্কেটে হকারদের ফেরানোর জোর প্রস্তুতি চলছে।

এজন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে লালদিঘীর মাঠ। মাঠ প্রস্তুতের পর হকাররা তাদের ঠিকানায় না ফিরলে কঠোর অ্যাকশনে নামবে প্রশাসন। সড়ক ও ফুটপাতে কোন হকার বসলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আগাম ঘোষণা দিয়েছে সিটি করপোরেশন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০২১ সালে তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম লালদিঘীরপাড়ের মাঠে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। ফুটপাত ছেড়ে নতুন ঠিকানায় ব্যবসা স্থানান্তর করেন কয়েকশ’ হকার। কিন্তু আলোক স্বল্পতা ও ড্রেনেজ সমস্যার কারণে হকাররা বেশিদিন সেখানে থাকতে চাননি। এরপর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই মাঠে ফের হকারদের পুনর্বাসন করা হয়।

কিন্তু ২০২৪ সালের ৫  আগস্টের পর বিশৃঙ্খল পরিবেশের সুযোগ নিয়ে লালদিঘীরপাড় মাঠ ছেড়ে হকাররা ফের চলে আসেন সড়কে। তবে এবার নগরীর ফুটপাত ও সড়ক হকারমুক্ত করতে জোটবদ্ধ হয়েছে জেলা প্রশাসন, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)।

জেলা প্রশাসন ও সিসিকের উদ্যোগে লালদিঘীরপাড় মাঠ ব্যবসা উপযোগী করতে সংস্কার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। লালদিঘীরপাড় মাঠকে হকারদের ঠিকানা করতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলছে প্রস্তুতিমূলক কাজ। ইতোমধ্যে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ হকারমুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের কঠোরতায় এখন এই ব্রিজে হকার বসার সাহস পাচ্ছেন না।

হকার উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন প্রসঙ্গে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘লালদিঘীরপাড়ে পুরোদমে কাজ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি ১০ দিনের মধ্যে লালদিঘীরপাড় অস্থায়ী হকার্স মার্কেটের কাজ শেষ করতে। এখানে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার হকার ব্যবসা করতে পারবেন।”

জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম জানান, ‘হকারদের তথ্য সংগ্রহ চলছে, ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। আগের উদ্যোগে সমস্যা ছিল অবকাঠামো ও পরিবেশে। এবার বিদ্যুৎ, পানি, নিরাপত্তা ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতা ছাড়া ফুটপাত ও সড়ক হকারমুক্ত করা সম্ভব নয়। তারা যেন হকার মার্কেটে যান। ক্রেতারা গেলে হকাররা তাদের জায়গা ছেড়ে সড়কে আসবে না।’ নির্ধারিত সময়ের পর যদি কোনো হকার রাস্তায় বসেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, লালদিঘীরপাড় মাঠ প্রস্তুতের পর হকারদের পুনর্বাসন করা হবে। এরপর যদি কোন হকার সড়কে বা ফুটপাতে বসেন তবে তাদেও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে লালদিঘীরপাড় মাঠে ব্যবসা নিয়ে হকাররা এখনও কিছুটা দ্বিধায় আছেন। তাদের অভিযোগ, লালদিঘীরপাড়ে ক্রেতা টানতে সময় লাগবে। পাশাপাশি স্থায়ী অবকাঠামো না থাকলে ব্যবসা টিকানো কঠিন হবে। এজন্য অস্থায়ী মার্কেটে হকারদেরকে ব্যবসার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *