প্রবীণ দিবস

সম্পাদকীয়

বিশ্ব প্রবীণ দিবস আজ। সমাজের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে মর্যাদাপ্রাপ্ত প্রবীণদের যথাযথ সম্মান ও প্রাপ্য অধিকার প্রদানের লক্ষে এই দিবসটি পালিত হয়। জাতিসংঘ ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি প্রতিবছর ১ অক্টোবর পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ১৯৯১ সাল থেকে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয়।

বার্ধক্য মানবজীবনের অমোঘ সত্য একটি অধ্যায়। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই মানুষ তার জীবনের কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতিতে সমগ্র বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ফলে পৃথিবীর সব দেশেই প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। প্রবীণ ব্যক্তিরা সমাজের শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের শ্রম ও মেধায় সভ্যতার অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। সত্যি বলতে কি, প্রবীণরা আমাদের সম্পদ, আমাদের গর্বের জায়গা। শারীরিক দুর্বলতা বা অনেক ক্ষেত্রে অক্ষমতা একজন বয়স্ক মানুষকে অসহায় করে তোলে। এ অবস্থায় যদি আবার পরিবারের সদস্যদের অবহেলা-অসহযোগিতা কপালে জুটে যায়, তবে নিদারুণ কষ্টকর জীবন নিয়ে একজন প্রবীণকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। বেড়ে চলে তাদের অসহায়ত্ব। এই অসহায় প্রবীণদের কথা ভেবেই বিশ্ব প্রবীণ দিবসের সূচনা হয়েছে। জাতিসংঘ ৬০ বছর বয়সী মানুষকে প্রবীণ হিসেবে গণ্য করেছে। এরা আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

অথচ এই প্রবীণসমাজ অনেকটা সমাজ-সংসারে বোঝা হয়ে জীবন ধারণ করেন। প্রবীণদের জ্ঞ্যাণ ও অভিজ্ঞতায় গড়ে উঠছে সমাজ-সভ্যতা। একজন প্রবীণ যতই অসহায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে না কেন, একজন তরুণ বা যুবকের বুদ্ধির অপরিপক্কতার তুলনায় শারীরিক দুর্বল প্রবীণ ব্যক্তির বুদ্ধির পরিপক্কতা যে কোন সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখায়।তাছাড়া আজকের নবীন এক সময় প্রবীণ হবে। আমাদের ভরসার স্থল এই প্রবীণ মানুষগুলোকে ভালো রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বৃদ্ধাশ্রম যেন কোন প্রবীণের শেষ বয়সের ঠিকানা না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি। একজন প্রবীণ ব্যক্তি আমাদের পরিবারের বাইরের কেউ নন বরং এরা আমাদেরই আপনজন, পরিবারের দায়িত্বশীল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের প্রতি ভালো আচরণ, সব ক্ষেত্রে মূল্যায়ন শুধু তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধই নয়, এটা তাদের অধিকার।

আজকের এই বিশ্ব প্রবীণ দিবসে আমাদের প্রত্যাশা, প্রবীণদের প্রতি অবজ্ঞা নয়, বরং তাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে। প্রবীণরা যাতে সফল, সার্থক ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন অতিবাহিত করতে পারেন, তার জন্য দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কারণ তাদের কারণেই আমরা পৃথিবীর আলো-বাতাসে বড় হয়েছি। আমাদের সমাজ বাসযোগ্য হয়েছে এই প্রবীণ মানুষগুলোর পরিশ্রমে, তাদের প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তায়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *