সুশাসন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটা তাঁর চতুর্থ মেয়াদ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসেও এটা একটা রেকর্ড। একটানা এত দিন কেউ শাসনক্ষমতায় থাকেননি। টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের চতুর্থ বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১৪ বছরে অনেক এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা বলেছেন। কিভাবে অর্জিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, সেই ধারণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প-কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে রোবটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

রূপকল্প ২০২১-এর পর রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। রূপকল্প ২০২১-এ অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ এক বড় অর্জন। এসব অর্জনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রূপকল্প ২০৪১ লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে টিকিয়ে রাখা।

গত ১৪ বছরে সরকার জনগণের জন্য কী করেছে, তা মূল্যায়নের ভার তিনি দেশের মানুষকেই দিয়েছেন। বর্তমান মেয়াদে এসে ২০২০ ও ২০২১ সালে কভিড মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে হয়েছে সরকারকে। এর ওপর যোগ হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে।

গত ১৪ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এই সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়কপথে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। গত নভেম্বরে এক দিন ১০০ সেতু এবং ডিসেম্বরে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়। দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এ এক অনন্য অর্জন। গত ২৮ ডিসেম্বর মেট্রো রেল উদ্বোধন করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে শুধু বাংলাদেশই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এসব অর্জনের কথাও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেছেন। জোট সরকারের শেষ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সুশাসন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *