আমিই বড়। আমার থেকে সেরা আর কেউ নেই। এ জাতীয় দম্ভ প্রকাশ করা অহংকারী মানুষের পরিচয় বহন করে। নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা, বড়ত্ব প্রকাশ করা, অন্যকে ছোট ভাবা ও হেয় প্রতিপন্ন করাই অহংকার। হাদীসের পরিভাষায়, হক্বকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হলো অহংকার। হযরত সালমা ইবনুল আকওয়া (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: কোন ব্যক্তি অহংকারবশত নিজেকে বড় মনে করে মানুষদেরকে এড়িয়ে চলতে থাকে। অবশেষে তার নাম অহংকারী ও উদ্ধতদের তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সে অহংকারী ও উদ্ধতস্বভাবের ব্যক্তি বিপদে পতিত হয়। [তিরমিযী]
আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশ: তিনি (আল্লাহ) বললেন, তাহলে তুমি এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে, এটা হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত। [৭. সূরা আল-আরাফ: ১৩]। জমিনে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায়, আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখবো। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। [৭. সূরা আল-আরাফ: ১৪৬]। অহংকারীর স্থায়ী ঠিকানা জাহান্নাম ছাড়া অন্য কিছু নয়। আল্লাহ তা’য়ালার ঘোষণা: কাজেই তোমরা দরজাগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করো, তাতে স্থায়ী হয়ে। অতঃপর অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট! [১৬. সূরা আন-নাহল: ২৯]। অহংকারীর আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়? [৩৯. সূরা আয-যুমার: ৬০]। আবার একই সূরার ৭২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়া’লা জানিয়ে দেন: বলা হবে, জাহান্নামের দরজাসমূহে প্রবেশ করো, তাতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। অতএব অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।
অহংকারীরা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে। ৭. সূরা আল-আরাফের ৪০ নং আয়াতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে: নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে মিথ্যারোপ করে এবং তা সম্বন্ধে অহংকার করে, তাদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আর এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দেবো। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) থেকে এ আয়াতের বর্ণিত এক তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে যে, তাদের আমল ও দোয়ার জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না। অর্থাৎ তাদের দোয়া কবুল করা হবে না এবং তাদের আমলকে ঐ স্থানে যেতে দেয়া হবে না, যেখানে আল্লাহর নেক বান্দাহদের আমলসমূহ সংরক্ষিত রাখা হয়। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী কারীম (সা:) বলেন: যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। একজন বললো, যে কোন ব্যক্তি তো চায় যে, তার কাপড়টি সুন্দর হোক, জুতাটি আকর্ষণীয় হোক (এটাও কি খারাপ)? তিনি বলেন: আল্লাহ নিজে সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। অহংকার হলো, গর্বভরে সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। [মুসলিম]
মানুষের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কথা বলো না এবং জমিনে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো উদ্ধত ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। [৩১. সূরা লুকমান: ১৮] তাফসীরে কুরতুবী ও ফাতহুল কাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, লোকদের সাথে সাক্ষাৎ ও কথাবার্তার সময় মুখ ফিরিয়ে রাখার মাধ্যমে যদি তাকে অপমান করা উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা নিষিদ্ধ হবে। আয়াতের শেষাংশে মুখতাল ও ফাখূর শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। তাফসীরে ইবনে কাসীরের বর্ণনায় এসেছে: মুখতাল মানে হলো, এমন ব্যক্তি যে নিজেই নিজেকে বড় কিছু মনে করে। আর ফাখূর হলো, যে অন্যের কাছে নিজের বড়াই প্রকাশ করে। ফাতহুল কাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, মানুষের চালচলনে অহংকার, দম্ভ ঔদ্ধতের প্রকাশ তখনই অনিবার্য হয়ে ওঠে, যখন তার মাথায় নিজের শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাস প্রবেশ করে এবং সে অন্যদেরকে নিজের বড়াই ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করাতে চায়।
অহংকার থেকে রক্ষা পেতে চাইলে আত্মসমালোচনা ও আত্মপর্যালোচনার বিকল্প নেই। নিজেকে ছোট ও ক্ষুদ্র ভাবতে হবে। মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। দোয়া করতে হবে। বিনয় ও নম্রতার চর্চা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। ক্ষমতা, মেধা, যোগ্যতা, সৌন্দর্য, সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মালিক নিজে নই। বরং আল্লাহ তা’য়ালা তা দান করেছেন। এই চিন্তা সর্বদা অন্তরে জাগরূক রাখা জরুরী। দুনিয়াতে প্রাপ্ত নিয়ামতগুলো অস্থায়ী ও ক্ষণিকের। এই মনোভাবে বিশ্বাসী হওয়াটা অহমিকা থেকে দূরে রাখতে সহযোগিতা করবে। আল্লাহ তা’য়ালা! আমাদের যাবতীয় ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন। অহংকারমুক্ত জীবন দান করুন। আমীন।
লেখক: মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার, সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীন।
শেয়ার করুন