গাজীপুরের ফলে সিলেটে ‘দুশ্চিন্তায়’ আওয়ামী লীগ, অন্যদের স্বস্তি

সিলেট

গত ২৫ মে ইভিএমে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যান নৌকা প্রতীকে প্রার্থী আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান। তাকে প্রায় ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। সিলেটে মেয়র পদে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ৫ জনের বাতিল হয়। ফলে এখন লড়াইয়ে রয়েছেন ৬ প্রার্থী।

সিলেটে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় দলটির যুক্তরাজ্য শাখার নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। স্থানীয় নেতাদের বাদ দিয়ে প্রবাসী একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় শুরু থেকেই ক্ষোভ ছিল আওয়ামী লীগের মধ্যে। প্রকাশ্যে প্রচারে থাকলেও ভেতর থেকে দলের অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না আনোয়ারুজ্জামানকে।

স্থানীয়দের এই ক্ষোভ আঁচ করতে পেরে সম্প্রতি সিলেটে আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থনে গত ৪ মে কর্মী সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আগের নির্বাচনে কামরানের পরাজয়ের প্রসঙ্গটি তুলে এনে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গিী কবির নানক বলেন, ‘দলে খন্দকার মোশতাকের অনুসারী যেমন রয়েছে, তেমনি মুজিব আদর্শের লড়াকু এবং ত্যাগী কর্মীরাও রয়েছেন। মোস্তাক বাহিনীর কারণেই বিগত দিনে এই নগরের অভিভাবক বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারতে হয়েছে। এবার সেই সুযোগের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ।’

দলের এই ক্ষোভের কারণে প্রথমিকে আনোয়ারুজ্জামান কিছুটা অস্বস্থি থাকলেও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী শেষ পর্যন্ত প্রার্থী না হওয়ায় অসেকটাই স্বস্থি ফিরে আসে। তবে গাজীপুরের ফলে আবার অস্বস্থিতি ফেলেছে তাকে।

গাজীপুরে একজন ছায়াপ্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতার পরাজয়ে ভাবাচ্ছে দলটির সিলেটের নেতা-কর্মীদেরও। যদিও প্রকাশ্যে তারা এব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি। সিলেটে গাজীপুরের মতো কিছু হবে না বলেই প্রকাশ্যে দাবি করছেন তারা।

আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সম্পাদকীয় পদের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের মধ্যে কিছু বিভেদ সত্ত্বেও আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী না হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনেকটা সহজেই জিতে যাবেন বলে মনে করছিলেন দলের অনেকে। কিন্তু গাজীপুরের ফলে তাদের ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। তারা নড়েচড়ে বসেছেন। গাজীপুরে একজন ছায়া প্রার্থী যেভাবে বর্ষীয়ান একজন নেতাকে হারিয়ে দিলেন তা সবাইকে ভাবাচ্ছে। আজমত উল্লাহর তুলনায় সিলেটের প্রার্থী একেবারেই আনকোড়া। নগরের ততোটা পরিচিতও নয়।

তিনি বলেন, আরিফের প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের প্রচারে অনেকটা ঢিলেমি এসেছিল। তবে গাজীপুরের ফলের পর তারা আবার শক্তভাবে মাঠে নেমেছে। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও প্রচারে গতি বাড়িয়েছেন। সহজে যে জয় পাওয়া যাবে না এটি তিনি বুঝতে পারছেন।

গাজীপুরে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলেও সিলেটে সেই আশঙ্কা নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘গাজীপুর ও সিলেটের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সিলেটে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতা-কর্মী নৌকার জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছেন। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ কখনো পরাজিত হয় না। এটার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরেকবার প্রমাণিত হবে।’

তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে যারা এতোদিন নানা গল্পকথা বলছিলেন, গাজীপুরের নির্বাচনের পর তাদের মুখে কুলুপ পড়েছে। মানুষের কাছে প্রমাণ হয়েছে, তারা ভোটারদের বিভ্রান্ত করতেই ইভিএম নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল।

ইভিএম নিয়ে শঙ্কা, প্রশাসন আর নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। আর নির্বাচনে প্রার্থী হলেও একই শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান।

নজরুল বাবুল গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তোলেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে প্রার্থিতা নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলে শঙ্কা কিছুটা কেটেছে বাবুলের। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টি প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, গাজীপুরের নির্বাচন প্রমাণ করেছে সামান্যতম সুযোগ পেলে ভোটাররা তাদের মতামত প্রকাশে উদগ্রীব। কিন্তু সিলেটে এখনো সে পরিবেশ তৈরি হয়নি। সিলেটে প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিন্তু নিবূাচন কমিশন এতে নিশ্চুপ।

তিনি বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনের পর ভয় কিছুটা কাটলেও ইভিএম নিয়ে অস্বস্তি পুরো দূর হয়নি। কারণ সিলেটের ভোটাররা ইভিএমের সাথে পরিচিত নন। তাদের আগে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ইভিএমে ভোট প্রদানের গতি অনেক মন্থর। অনেক সময় ইচ্ছে করেও মন্থর রাখা হয়। কোনো কারচুপি করা না হলে সিলেটেও গাজীপুরের মতো নৌকার বিপক্ষে ভোট বিপ্লব হবে।

এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, কেউ কেউ অটোপাশের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু গাজীপুরের মানুষজন বুঝিয়ে দিয়েছে অটোপাশের সুযোগ নেই। জনতা সজাগ থাকলে ভোটচুরিরও সুযোগ পাওয়া যাবে না।

এই তিনজন ছাড়াও সিলেটে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু ও মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *