মো: রেজাউল ইসলাম শাফি, কুলাউড়া(মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
অপ্রসস্থ্য সড়ক,ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থা,মেয়াদ উত্তীর্ণ ও লক্ষরঝক্কর মার্কা গাড়ি,অপ্রাপ্ত বয়স্ক ড্রাইভার এবং গন সচেতনতার অভাবে প্রতিদিন ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। ঝরছে শত শত মানুষেরপ্রাণ। প্রতিদিনই খবরের কাগজে ভেসে উঠছে বীভৎস সব লাশের ছবি। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর যেন আমাদের দৈনন্দিন কাজের অংশ হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ ঝরলেও তা আমাদের মনকে আবেগতাড়িত করে না।
কিন্তুু পাতর দিল কেও নাড়া দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায়। বিশেষ করে জন্মভুমি কুলাউড়ায় দীর্ঘদিন পর প্রবাস ফেরত ভাইকে সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুলাউড়ায় নিয়ে আসার পথে সেই প্রবাসী সহ একই পরিবারের ৪ জন ও গাড়ি চালকের ইন্তেকাল সহ্য করার মতো নয়। এর দু দিন পরেই অপর একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের সামনেই শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়।আহত মা ৩ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষমেষ মৃত্যুর স্বাধ গ্রহণ করেন।এছাড়া আজ কাদিপুর ইউনিয়নে চালক পিতার ট্রাক্টার গাড়ির নিছে পড়ে সন্তানের মৃত্যু হয়।এ যেনো মৃত্যুর মিছিল চলছে।
নিহতের স্বজনদের আর্তচিৎকার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করলেও তা যেন আমাদের বিবেককে নাড়া দিতে পারছে না। কিন্তু আমরা কি একবারের জন্যও ভেবে দেখি নিহতদের পরিবারের কথা? তারা কি ভুলতে পারে তাদের স্বজন হারানোর ব্যথা?
যে মানুষটি ছিল পরিবারের একমাত্র অবলম্বন, একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সব স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে চুরমার করে দেয়। তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কমবেশি সবারই জানা। চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
এ ছাড়া চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত ও মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালায়, যার ফলে একসময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। তাই চালকদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই অসুস্থ বা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না। প্রত্যেক মানুষেরই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম প্রয়োজন।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ওভারটেকিং প্রবণতা। সাধারণত রাস্তায় ধীরগতির গাড়িগুলোকে ওভারটেকিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এ সময় হর্ন বাজিয়ে সামনের গাড়িকে সংকেত দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় সংকেত না দিয়ে একজন আরেকজনকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে, যার ফলে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি বের হতে না পেরে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাই সঠিক নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ওভারটেক করা উচিত।
সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হল ত্রুটিপূর্ণ সড়কব্যবস্থা। মহাসড়কগুলোতে বাঁক থাকার কারণে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। রাস্তার পাশে হাট-বাজার স্থাপন এবং ওভারব্রিজ না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ হল মহাসড়কগুলোতে দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি ধীরগতির যানবাহন চলাচল। গতির তারতম্য থাকায় দ্রুতগতির গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে ধীরগতির বাহন রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে। তাই মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করা জরুরি।
ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই আমাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কগুলোকে ডিজিটাল নজরদারির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে- মনে রাখতে হবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
লেখক পরিচিতিঃ
বার্তা প্রধান, কেবিসি নিউজ।
সাধারণ সম্পাদক
কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি।