‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হিসেবে আপনার কর্মদক্ষতা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে আপনার সংসদীয় এলাকা। একই সাথে আপনার প্রজ্ঞাদীপ্ত পরামর্শ এবং সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’ এসব কথা সম্বলিত বড় বড় বিলবোর্ড আকারের ব্যানারে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে। প্রথম দেখায় মনে হবে ছাত্রলীগের কোনো নেতা হয়তো একজন এমপিকে এই শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র সংগঠন বা সাধারণ ছাত্র ছাত্রী এই শুভেচ্ছা জানাননি। এই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খোদ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের ৩০ মাসের বেতন বকেয়া রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এধরনের কাজে বিরূপ মন্তব্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এমনকি এ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও এই শুভেচ্ছা বার্তা দেখে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
সরজমিনে দেখা যায়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশের প্রধান সড়ক সিলেট নগরীর কানিশাইল সড়কের প্রবেশমুখে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশেসহ কয়েকটি জায়গায় এই শুভেচ্ছা বার্তা সম্বলিত ব্যানার সাঁটিয়াছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যদি এমন রাজনৈতিক নেতাদের মত শুভেচ্ছা বার্তা দেন তাহলে রাজনৈতিক নেতারা কি করবে।
এই শুভেচ্ছা ব্যানার সাঁটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সেবা শাখা থেকে গত ১২ জানুয়ারি জারিকৃত নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়নি উল্লেখ করে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষক বলেন, গত ৩০ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন বকেয়া। অথচ আমাদের উপাচার্য ব্যানার তৈরি করার টাকা ঠিকই পাচ্ছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এধরনের ব্যানার সাঁটাতে পারেন না। এই শুভেচ্ছা ব্যানার নিয়ে সারা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরাও কথা বলছি, শিক্ষার্থীরাও বলছে, এলাকার মানুষজনও বলছেন। একজন উপাচার্যের এধরনের শুভেচ্ছা বার্তা দেয়া মানানসই হয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরাও বলতেছে একজন উপাচার্য এধরনের শুভেচ্ছা দিতে পারেন না। এধরনের শুভেচ্ছা না দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে তারপরও উপাচার্য এমন কাণ্ড পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ইতোমধ্যে জাতীয় পত্রিকায় এধরনের শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তোপের মুখে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে নবনিযুক্ত দুজন মন্ত্রীকে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারকে দেওয়া এক চিঠিতে এ ব্যাখ্যা চেয়েছে ইউজিসি।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, প্রথমত উনি শুধু এমপি হিসেবে না , উনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা। উনি এমপি নির্বাচিত হলেও এমপি হিসেবে নয় মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা আমি খেয়াল করিনি। যদি নিষেধাজ্ঞা থাকে আমি এগুলো সরিয়ে নেব।
শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রেখে এমপিকে ব্যানারে শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা ভুল ব্যাখ্যা। আর বেতন বকেয়ার সাথে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। যে শিক্ষকরা বলছেন বেতন দেওয়া হচ্ছে না, শুভেচ্ছা ব্যানার সাঁটানো হচ্ছে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করেন তাহলে সব বুঝতে পারবেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষাবিদ বলেন, উপাচার্যদের এমপি মন্ত্রীদের শুভেচ্ছা দিতে টাকা খরচ করার কোনো ক্ষমতা নেই। এ সংক্রান্ত খরচের কোনো খাত নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে একটা কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা দিতে পারি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দিতে পারি না। এখন কোনো উপাচার্য যদি এমন কাজ করেন এটা নির্ভর করে ওই উপাচার্যের ব্যক্তিত্বের উপর।
শেয়ার করুন