বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগরের শীর্ষ পদে ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ’ নেতা : বিতর্ক!

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগরের নবগঠিত কমিটিতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে। মহানগরের শীর্ষ আহ্বায়ক পদে চিহ্নিত ছাত্রলীগ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে তার সরব উপস্থিতির ছবি পোষ্ট করে অনেকেই তীর্যক মন্তব্য করেছেন।এছাড়া কমিটি গঠনে আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীদের মতামত নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বিতর্কের ঝড় । বিতর্কিত কমিটি বাতিল করা না হলে গণপদত্যাগের ডাক দিয়েছেন পদপ্রাপ্ত একটা বিশাল অংশ।

এদিকে কমিটি গঠনে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের অভিযোগের তীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে সিলেটে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী আসাদুল্লাহ আল গালিবের দিকে। তিনি কারো মতামত না নিয়ে নিজের মতো করে এই কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রে দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক ছাত্রনেতা।অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আসাদুল্লাহ আল গালিবের মুঠোফোনে একাধিকার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এর আগে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল সিলেট মহানগর আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কমিটি প্রকাশ করা হয়।

তবে কমিটি প্রকাশের পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় থাকা সিলেটের নেতাকর্মীরা বিশাল অংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখালেখি করছেন তারা।

এমনই ক্ষুব্ধ একজন জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সিলেটের অন্যতম সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন। তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন- সিলেটের আন্দোলনে জীবনবাজি রেখে ময়দানে লড়াইকারীদের বড় একটা অংশকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গালিব ভাইয়ের নিজের কথামতো কাজ করবে সে যদি লীগও হয়, এখন দেখলাম তাই হলো। এমন একজনকে কমিটির প্রধান করে রাখা হলো- যে লীগের হয়ে ক্ষমতা চর্চা করতো। যাকে আমরা কখনো জুলাই বিপ্লবে তো অংশগ্রহণ করতে দেখিনি। লীগের কিছু টোকাই সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথে মিশে আন্দোলনের অবস্থা জানতে চেষ্টা করতো, তেমন দু’একটা পিক হয়তো থাকতে পারে। উদীচী আর ছায়ানটের সদস্য হয়েও এখন সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা। এমনকি যেই আন্দোলনের একজন অংশীজন আমি। কেন্দ্রের ১৫৮ জনের মধ্যে আমিও একজন। আমার থেকে কোনপ্রকারের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। সুতরাং সত্যিকারের বিপ্লবী যাদের এই কমিটিতে নামমাত্র রাখা হয়েছে তারাও যেন সবার আগে এই কমিটি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। আমি এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করলাম। যারা হাসিনাকে ভয় পেয়ে চুপ ছিলোনা, তারা আশাবাদী এখনো চুপ থাকবে না।

এই পোস্টের নিচে কমেন্ট বক্সে ফয়সাল আরও মন্তব্য করেন- আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে আন্দোলন পরবর্তী কাহিনীগুলো একদম স্কিনশট শেয়ার দিয়ে বর্ণনা দিয়ে দিয়ে লিখবো।অসন্তোষ প্রকাশ করা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান- নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে এমসি কলেজের শিক্ষার্থী হাসান আহমদ চৌধুরী মাজেদকে মুখ্য সংগঠকের পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি পর্যন্ত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাকে কমিটিতে রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা।

মাজেদসহ আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে বলে জুলাই- আগস্টে বিপ্লবীদের একাংশের অভিযোগ।সার্বিক বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন- ‘ফেসবুকে এমন লেখালেখি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সার্বিক বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ত্যাগীদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগর শাখার নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ নেতারা হলেন- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসাইন আহ্বায়ক, মদন মোহন কলেজের ছাত্র তামিম আহমেদ সদস্য সচিব, এমসি কলেজের ছাত্র হাসান আহমদ চৌধুরী মাজেদ মুখ্য সংগঠক ও মদন মোহন কলেজের ছাত্র মো. রিয়াদ হোসেন মুখপাত্র।

কমিটির ১৯ জন যুগ্ম-আহ্বায়ক হলেন- মাহফুজুর রহমান সাকের, লুৎফুর রহমান, ফাহিমা আক্তার, সায়মন সাদিক জুনেদ, মুহাম্মাদ বিজয় খান, মোহাম্মদ জিয়াদ উল ইসলাম, সালমা বেগম, রুহুল আমিন, ফুয়াদ হাসান, তৈয়বুর রহমান তুহিন, আলি নেওয়াজ, মো. হালিম, আব্দুস ছামাদ সাদ্দাম, আতাহার আলী রাহাত, মো. জুবায়ের আহমদ, রেদোয়ান হোসেন শাওন, মো. জবরুল ইসলাম রায়হান ও শাহাবুদ্দিন খান।

আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম-সদস্যসচিব ২৩ জন, সংগঠক ৩০ জন ও ১৭৭ জন সদস্য রয়েছেন। এই আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ৬ মাস।এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ফয়সাল হোসেন বলেন, আমার বক্তব্য আমি ফেইসবুকে দিয়ে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় গ্রুপেও তথ্যটি শেয়ার করেছি। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক বিপ্লবী ছাত্র-নেতা গণ পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমি আশা করছি কেন্দ্র দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিবে। অন্যথায় এই ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপ নিতে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *