ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরই দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর ব্যতিক্রম নয় সিলেট। একদিনের ব্যবধানে সিলেটে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১২০ টাকা। খুচরা বাজারে এখন এ পেঁয়াজের কেজি ২৪০ টাকা। আর ভারতীয় পেয়াজ কেজিতে ৯০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেউ কেউ তা আবার ২২০ টাকাও দাম হাঁকছেন। হঠাৎ পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সিলেটের প্রধান পাইকারি আড়ৎ নগরীর কালীঘাটে গেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে ১০০ টাকা পাইকারি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। অনেকেই আবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবরে খুচরা দোকানেও হু হু করে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারের কোথাও কোথাও ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।
নগরীর বন্দরবাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসেছিলেন সিকন্দর আলী। কিন্তু পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম শুনে তিনি হতভম্ব। আক্ষেপের সুরে করে তিনি বলেন, ‘কোন দেশে বাস করছি আমরা! গতকাল যেখানে পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকা। সেই আলোকেই বাজেট করে বাজার করতে এসেছি। চাকরিজীবী মানুষ, আকস্মিক এমন দাম বাড়ায় এখন আধা কেজি পেঁয়াজ নিয়েই বাসায় ফেরতে হচ্ছে।’
কাপড় ব্যবসায়ী আরিফুল হক বলেন, কালীঘাটে এক রাতে কি পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেল? যাতে এক রাতেই দাম বেড়ে গেল ৫০ টাকা কেজি প্রতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীঘাটের এক ব্যবসায়ী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর থেকে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল প্রকারবেদে ১০০/১০২ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে ভারতের একটি সিদ্ধান্ত গতকাল প্রকাশ পাওয়ার পরপরই অনেকেই পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়ৎদাররা কিংবা অন্যান্য কালীঘাটের ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজের প্রচুর মজুদ রয়েছে। কিন্তু ভারতের একটি সংবাদ শোনার পরপরই রাতারাতি কাঁচা টাকা উপার্জন করতে তারা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলারে বেঁধে দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর আদেশ জারি করেছিল ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে সে সময় জানানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোয় আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলারে বহাল থাকছে বলে জানায় ভারত সরকার।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের দপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতের খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ রুপির মধ্যে।
এদিকে বাংলাদেশের স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ বছরের অধিকাংশ সময়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে। তবে মওসুমের শেষ দিকে এসে দাম বেড়ে গেলে আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে সরকার।
চলতি বছরর জুন মাসেও পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি ৩৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় উঠে গেলে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। ৮ ডিসেম্বর এ আদেশ জারি করে দেশটির সরকার। এদিন বিকেলে বাংলাদেশের বাজারে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রাতেই দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ১৮০-১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। রাত পোহাতেই তা আরও এক দফা বাড়ে।
শেয়ার করুন