শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র্যদের ঘর মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা মদখোর এবং জুয়াড়িদের মধ্যে বিতরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে বৃহস্পতিবার (০৭জুলাই) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবিবপুর ইউপির আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা অজিত দাস।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ব্রজবল্লভ দাস ও মানিক দাস আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দাই না। তাদের ওই গ্রামে কোনো ঘর-বাড়িও নাই। মানিক দাস প্রতিদিন লিটার খানেক মদ সেবন করেন আর ব্রজবল্লভ দাসের একমাত্র কাজই প্রতিদিন বাজারে জুয়াখেলা। বন্যায় তাদের কোনো ক্ষতিও হয়নি। তাদের মোটরসাইকেলও আছে। তাদের তালিকা প্রণয়নকারী ও যাচাই বাছাইকারীরা দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দশ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।
এবিষয়ে মুঠোফোনে অজিত দাস বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বন্যায় ঘর যাদের ভেঙেছে তাদের এই মানবিক সহায়তা দিয়েছেন। কোনো মদখোরদের মদ খাওয়ার জন্য আর জুয়াড়িদের জুয়াখেলার জন্য এই টাকা দেননি। আমি লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার চেয়েছি তালিকা করেছে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একই গ্রামে যদি এমন অনিয়ম হয়, তাহলে সারা উপজেলায় কি হয়েছে বুঝেন আপনারা।
এব্যাপারে হবিবপুর ইউপির ২নং ওয়ার্ড সদস্য বাবলু রায় বলেন তাদের নাম আমি তালিকায় দেই নাই। আমি এব্যাপারে কিছুই জানি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন এরার কথা কইও না আমারে। এরা বাজে মানুষ। বন্যায় গ্রামের অনেক দরিদ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এই সহায়তা পায় নাই। কারা এই তালিকা করল তাদের খোঁজে বের করা হোক। যাচাই বাছাইকারী শিক্ষক অখিল চন্দ্র দাস বলেন আমিও এব্যাপারে কিছু জানি না। তবে আংশিক ক্ষতির তালিকায় তাদের দিয়েছেন বলে জানান তিনি। বন্যায় গ্রামের অনেক দরিদ্র ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে বাহাড়া ইউপির উজান যাত্রাপুর গ্রামের লিটন, সজল, জহরলাল তালুকদার বলেন, আমরার বাড়িঘরে থাকার মত কোন অবস্থান নাই। এখনও আমরা স্কুলে অবস্থান করছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কোন টাকা পাইনি। অথচ যার কোন ক্ষতি হয় নি তারা টাকা পেয়েছে। এব্যাপারে বাহাড়া ইউপির ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মধুসূদন দাস বলেন, আমি বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দিয়েছি কিন্তু তারা কেন টাকা পায়নি আমি জানিনা।
অন্যদিকে বাহাড়া ইউপির ২ নং ওয়ার্ডেও বাহাড়া উত্তর হাটিতে অনিয়মের চিত্র দেখা যায়। ঐ গ্রামের রূপক, মনোরঞ্জন, জিতেন্দ্র দাশ বলেন আমাদের এই গ্রামে বাড়ি-ঘর ক্ষতি হয়েছে, আমরা শুনেছি প্রধানমন্ত্রী সাহায্য করছে কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্তরা কোন সাহায্য পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে ২ নং ওয়ার্ড সদস্য দেবব্রত তালুকদার বলেন, আমি এদের বাড়ি-ঘর যে ভেঙেছে জানি না। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন মেম্বারের সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও কোন সদুত্তর পায় নি।
একই পরিস্থিতি বাহাড়া ইউপির ১ নং ওয়ার্ডেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন যারা প্রকৃত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বেশির ভাগই প্রধানমন্ত্রীর টাকা পায় নি। যারা পেয়েছে তাদের মধ্যে দুই জনের কোন ক্ষতি হয় নি। এ ব্যাপারে ওয়ার্ড সদস্য সহদেব দাশের সাথে যোগাযোগ করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব মহোদয়কে মুঠোফোনে বারংবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেন নি।
শেয়ার করুন