ডেস্ক : প্লাবন ভূমি, নদী অববাহিকা ও হাওর অঞ্চল দখল হওয়ায় বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে বলে এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। রাতের আলোর উজ্জলতা বিশ্লেষণ করে অভিনব এ গবেষণাটি করেছেন দেশ-বিদেশের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
গত দুই দশকে নাসার স্যাটেলাইটে ধারণ করা বাংলাদেশ অংশের রাতের ছবি বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন, নদ-নদীর দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৯২ শতাংশ বনভূমি, ৬ শতাংশ তৃণভূমি ও ২৮ শতাংশ অনুর্বর ভূমি কমেছে। এ ছাড়া, নদ-নদীর অববাহিকা, প্লাবন ভূমি ও হাওর অঞ্চলের ১২ শতাংশ এলাকায় নগরায়ণ ও কলকারখানা গড়ে উঠেছে। দেশে নদী অববাহিকায় ১৫ লাখ মানুষ বেড়েছে। বন্যার বেশি ঝুঁকিতেও রয়েছে তারা। দেশের ৭টি শহরের রাতের আলোর উজ্জ¦লতা বিশ্লেষণ করা হয়। শহরগুলো হলো- ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর ও খুলনা। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর রাতের উজ্জ¦লতা সবচেয়ে বেড়েছে সিলেটে। গত দুই দশকে প্রায় ৬৫ শতাংশ আলোর উজ্জ¦লতা বেড়েছে।
২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নাসার ধারণ করা বাংলাদেশ অংশের ছবি বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা ও রাত ২টা থেকে রাত ৩টার সময়ের ছবিতে দেখেছেন কোথায় কোথায় আলোর উজ্জ¦লতা বেড়েছে। গবেষণাটি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. আশরাফ দেওয়ান, ডার্ক বুতজে ও গ্রিগরি কিসেলেভ; যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ড. আরিফ মাসরুর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুব মোর্শেদ।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বই ও জার্নাল প্রকাশনা কোম্পানি টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিসের জিওকার্টো ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশনায় ‘ডায়ানামিকস অব হিউম্যান প্রেজেন্স অ্যান্ড ফ্লাড এক্সপোজার রিস্ক ইন ক্লোজ প্রক্সিমিটি টু বাংলাদেশ রিভার নেটওয়ার্ক : অ্যান ইভ্যালুয়েশন উইথ মাল্টিটেম্পোরাল ইমাজারি’ শিরোনামে গবেষণাটি গত ২২ জুন প্রকাশিত হয়।
ড. মাহবুব মোর্শেদ বলেন, স্বাভাবিকভাবে বসতি বা কলকারখানা গড়ে উঠলে সেখানে আলো জ্বলবে। এই আলোর উজ্জ¦লতার মাধ্যমে একটা ধারণা পাওয়া যায়, কোথায় উজ্জ¦লতা বেড়েছে; কোথায় আলোর উজ্জ¦লতা কম বা বেশি। এসব বিশ্নেষণ করে প্লাবন ভূমি, নদী অববাহিকা ও হাওর অঞ্চলের মানুষের একটি দখলের চিত্র পাওয়া যায়।তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত বাড়বে। প্লাবন ভূমি, হাওর ও নদী অববাহিকা দখল হয়ে গেলে এই পানি যাবে কোথায়? স্বাভাবিকভাবে দীর্ঘমেয়াদে বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে দেশ।
সিলেটের বন্যার পেছনে হাওর দখল : প্লাবন ভূমি, নদী অববাহিকা ও হাওর অঞ্চলে মানুষের হস্তক্ষেপকে সিলেট অঞ্চলে বর্তমান বন্যার বড় কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।তারা বলছেন, সিলেটের হাওর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি নগরায়ণ হয়েছে। এ অঞ্চলে রাতের উজ্জ¦লতাও বেড়েছে বেশি। ২০০০ সালের চেয়ে বর্তমানে আলোর উজ্জ¦লতা ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।
অধ্যাপক মাহবুব বলেন, সিলেটে এমনিতেই বৃষ্টিপাত বেশি হয়। এর মধ্যে সিলেটের অধিকাংশ আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন উপশহর গড়ে উঠেছে হাওর দখল করে। বন্যা বা বৃষ্টির পানি সঙ্গে সঙ্গে নেমে যায় না। কিছু সময় প্লাবন ভূমি, হাওর ও নদী অববাহিকায় অবস্থান করে। কিন্তু এসব মানুষের দখলে চলে যাওয়া পানি পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। বন্যা হচ্ছে। এসব অবকাঠামোতে পানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দ্রুত নামতে পারছে না। ফলে বন্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।