সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের নির্বাচনী জনসভায় সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হককে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে কমিশনের উপসচিব (আইন) মো. আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হক বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের একটি নির্দেশনা সোমবার পেয়েছি। নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ-১ আসনের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের গোলকপুর বাজারে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন এম. নবী হোসেন। সেখানে তিনি ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক আপত্তিকর বক্তব্য দেন। এতে তিনি নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১১ (ক) বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দায়ের করার জন্য ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেনের ওই বক্তব্যের পর সুনামগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ প্রবাল চক্রবর্তী তাকে সশরীরে ৪ জানুয়ারি কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। নবী হোসেন ওই দিন কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনে।
প্রসঙ্গত, জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের পক্ষে ওই দিনের জনসভায় বলেছিলেন, আমাদের মনোনয়ন না দেওয়ার কারণ হলো ‘হিন্দু কোটা’। এবার আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু কোটায় ১৫টি সিট দিয়েছেন। তাদের কোটা আছে। এই কোটা প্রথায় ৫০ বছর ধরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কোটাগত নির্বাচন করতেন। তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তাও দুবার নির্বাচন করেছেন।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের হিন্দু ভোটারদের উদ্দেশে নবী হোসেন বলেন, আপনারা এখন নৌকার প্রার্থীর জন্য এক হয়ে গেছেন। কিন্তু দিরাই-শাল্লার দিকে চেয়ে দেখুন সেখানে ৩৯ ভাগ হিন্দু ভোট। তারা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তার প্রতীক কেটলিতে ভোট দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। আমাদের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন গত ১৫ বছর হিন্দুদের যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন তা আমরা মুসলমানরা পাইনি। আমাদের আসনে আমরা মুসলমানরা ৮৭ পার্সেন্ট। সনাতনরা মাত্র ১৩ পার্সেন্ট। এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নেন, ভগবান আমাদের শাসন করবেন, না আমরা ৮৭ পার্সেন্ট মুসলমান ঈমানি দায়িত্ব পালন করব ? যদি ঈমানি দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে ৭ জানুয়ারি কেটলিকে ভোট দেবেন।
এম নবী হোসেন ওইদিন আরও বলেন, এবার পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কাকুতি-মিনতি করেছেন তার আপন ভাই আমীন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে সব কূল রক্ষা করে চলতে হয়। প্রধানমন্ত্রী তার কথায় জয়া সেনগুপ্তাকে বাদ দিয়ে আল আমীন চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এই আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। এবারের নির্বাচনে তিনি নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। এবার এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাড. রনজিত সরকার।
শেয়ার করুন