আহবাব মোস্তফা খান :
সিলেট নগরে ডেঙ্গুর শঙ্কা মাঝে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। নগরবাসী মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। লোকজন বলছেন, মশকনিধন কার্যক্রমে ঢিলেমির কারণে মশার যন্ত্রণা বড়েছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, ঢিলেমি নয়, বৈরী আবাহাওয়ার কারণে কিছুটা হোঁচট খেয়েছে মশক নিধন কার্যক্রম।
সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ একটি বিশেষায়িত কাজ। এ কাজ কীটতত্ত্ববিদের। কিন্তু সিলেট সিটি করপোরেশনে কোনো কীটতত্ত্ববিদ নেই। সিলেটে এটির কোন পদও নেই, লোকও নেই। যার ফলে টেকনিকাল বিষয়ের সমাধানগুলো যথাযথভাবে হচ্ছে না। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে অধিক মশার লার্ভা জন্মালেও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনা হয় না, তাই মশক নিধনে কার্যত কোন ‘ফিডব্যাক’ আসেনা নগরে।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মো: জাহিদুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনে কীটতত্ত্ববিদের কোন পদ নেই। তবে এ পদ না থাকলেও আমরা এডিস মশা কি, এর লার্ভা কি-তা আমরা শিখেছি এবং এগুলো আইডেনটিফাই বা শনাক্ত করতে পারি। তবুও কীটতত্ত্ববিদের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি।
কীটতত্ত্ববিদ কেন প্রয়োজন : মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর পেছনে নানা কারণ বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন সময়। আর মশা-মাছিবাহিত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে মশা-মাছির গতি-প্রকৃতি ও জীবনাচার দেখভালের দায়িত্বে থাকার কথা কীটতত্ত্ববিদদের। মশাবাহিত কোনো না কোনো রোগের প্রকোপ-কোথাও চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু; কোথাও ম্যালেরিয়া আবার কোথাও কালাজ্বর কিংবা ফাইলেরিয়া।
কীটতত্তবিদরা মশা-মাছির গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। পাশাপাশি কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে মশা নিধন কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকেন তারা। এ ছাড়া কীটনাশকের মানও তারাই পরীক্ষা করেন ফিল্ডটেস্টের মাধ্যমে।
কিন্তু সিলেট সিটি করপোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কীটতত্ত্ববিদ নেই। ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চলে মশা নিধন কার্যক্রম। এতে আশানুরূপ সুফল পায় না নগরবাসী।
এদিকে, এখন চলছে বর্ষা মৌসুম। নগরে তাই বেড়েছে মশার উপদ্রব। ডেঙ্গুর প্রকোপের মাঝে এই উপদ্রব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। তাই নতুন এ দুর্যোগ এড়াতে হলে মশকনিধন কার্যক্রমে ঢিলেমি দেওয়া যাবে না বলে মনে করেন তারা। মশকনিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।মশার উপস্থিতি জানার জন্য সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা প্রতিবছর তিনটি জরিপ করে। বর্ষা মৌসুমের আগে, বর্ষা মৌসুমের সময় এবং বর্ষার শেষে। এই জরিপ হয় মূলত ঢাকা শহরে। কিন্তু ঢাকার বাইরে এই জরিপ হয়না। অথচ এই তিনটি জরিপ থেকে মশা পরিস্থিতির কিছুটা পূর্বাভাস পাওয়া যায়।
এদিকে, ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মাঝে সিলেটে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। কিন্তু মশা নিধনে যেন সবসময়ই অসহায় সিটি করপোরেশন। বরাবরই তাদের জবাব ‘আমরা বসে নেই’। প্রতিদিনই কাজ চলছে।শিবগঞ্জ, রায়নগর, বাদাম বাগিচা, তেররতনসহ বিভিন্ন এলাকার অনেকে এ বলেন, মশার উৎপাত এত বেড়েছে যে, রাতে কোথাও শান্তিতে দুই মিনিট দাঁড়ানোর উপায় নেই। ঘরে-বাইরে একই অবস্থা। মশার কয়েল জ্বালিয়েও ঘরে দুই মিনিট শান্তিতে বসা যায় না।
বাসিন্দাদের এমন অভিযোগের মাঝে গতকাল বুধবারও বাদাম বাগিচার একটি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পেয়েছে সিটি করপোরেশন। এর আগে ওসমানী হাসপাতাল ও রাগিব-রাবেয়া হাসপাতালে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এ অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত সিলেটে একশ পেরিয়ে যায়।
তবুও কি সিটি করপোরেশন উদাসিন এমন প্রশ্ন ছিলো সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে। তিনি বলেন, মশক নিধনে এখন আবহাওয়া ‘সুইটেবল’ (উপযোগী) নয়। ওষুধ ছিটানোর সময় হঠাৎ বৃষ্টি চলে আসে, এতে ওষুধ নষ্ট হয়। তবুও আমরা কাজ করছি। ফগার চলছে। আরো ৫/৬টি ফগার গাড়ি বাড়ানো হবে।
এদিকে, প্রতিবছরই নগরের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবছর ডেঙ্গু নিয়ে কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনা শুরু হয় বর্ষা মৌসুমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর। সমস্যার আপাত সমাধানে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কাজ করা হয় অনেকটা অস্থায়ী ভিত্তিতে। ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হলে এডিস মশার বিষয়গুলো আর মনে থাকে না-এমনাটই মনে করেন নগরবাসী।
শেয়ার করুন