জুলাই মাসে তিন বছর পার করলো সিলেট যুবলীগের দুটি কমিটি। এই সময়ের মধ্যে হলো না পূর্ণাঙ্গ কমিটি। অপেক্ষা বাড়লো সিলেটের নেতাদের। শোকের মাস আগস্টে কমিটি ঘোষণা হবে না। সেপ্টেম্বরে ঘোষণার সম্ভাবনা আছে।
তবে- তিন বছরেও সিলেট যুবলীগের জেলা ও মহানগর ইউনিটের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেক নেতা ছাত্রলীগ ছেড়েছেন অনেক আগে। তাকিয়ে আছেন যুবলীগের দিকে। অপেক্ষার প্রহর শেষ না হওয়ায় দৌড়ঝাঁপ করছেন অন্যান্য শাখা সংগঠনেও।
মূল দল আওয়ামী লীগে চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সিলেট যুবলীগ রাজপথের রাজনীতিতে আধিপত্য রেখেছে। বিপদ-আপদে ছিল মানুষের পাশে। কর্মকাণ্ডে কোনো গাফিলতি হয়নি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলে সিলেটে যুবলীগের কার্যক্রম আরও চোখে পড়তো।
অপেক্ষায় থাকা অনেক নেতাই ঝিমিয়ে পড়েছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে সিলেট জেলা যুবলীগকে একাই টানছেন বর্তমান সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি। ওয়ান ইলেভেনের সেনা শাসনের মুখে যখন কেউ যুবলীগের দায়িত্ব নিতে চাইছিল না তখন সহ-সভাপতি থেকে এসে দায়িত্ব নেন শামীম আহমদ ভিপি।
তিনি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এরপর যুবলীগ বদলে দিতে কেন্দ্রের নির্দেশে সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৯ সালের ২৯শে জুলাই সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়।
গোটা জেলার কাউন্সিলরদের ভোটে জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামীম আহমদ। একই মাসের ২৭ তারিখ মহানগর সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্টিত হয়। এতে ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন আলম খান মুক্তি ও মুশফিক জায়গীরদার। দুটি কমিটি গঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করায় অনেক বেশি সাড়া ফেলে।
জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে উজ্জীবিত অবস্থা ফিরে আসে। এতে করে দীর্ঘদিন পর সিলেট যুবলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘোষণা ছিল; দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুটি ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু তিন বছরেও কমিটি গঠন হয়নি। তবে- বিগত ওই ৩ বছর ছিল দুর্যোগপ্রবণ। যুবলীগের জন্যও চ্যালেঞ্জের। ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ বিতর্কিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটিকে ঢেলে সাজানো হয়।
এতে করে কয়েক মাস কেটে যায়। এরপর আসে করোনা মহামারি। করোনার দাপট কমে আসার পর সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে হাত দেন সিলেটের চার নেতা। তবে- পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও তিন বছর দুটি ইউনিটেই কর্মী সংকট হয়নি। বরং রাজপথের শোডাউনে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি, করোনার সময় মানুষের পাশে থাকা, বন্যায় সহযোগিতা করা সব কর্মকাণ্ড ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে, এই কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালিত হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া এখন কারা যুবলীগে আছেন কিংবা নেই সেটি নির্ণয় করা কষ্টকর। এতে করে সক্রিয় থাকতে থাকতে ফ্রন্টলাইনের অনেক নেতা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা ও মহানগ যুবলীগের অনেক নেতাই ১৪-১৫ বছর ধরে অপেক্ষায় রয়েছে।অনেকে আবার ১৭ বছর থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। কমিটি গঠন হবে; তারা মুল্যায়িত হবেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় তারা অনেটা ‘খেই’ হারিয়ে ফেলছেন।
ইতিমধ্যে অনেকেই মূল দল আওয়ামী লীগ কিংবা শাখা সংগঠনগুলোতে চলে গেছেন। তবে- গত ৮ মাস ধরে একাধিকবার সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। হচ্ছে, হবে- এ ধরনের কথা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু বাস্তব হয় না। এই তোড়জোরের কারণও আছে।
জেলা ও মহানগর যুবলীগের বর্তমান দায়িত্বশীল নেতারাই সম্মেলন ও কাউন্সিলের পর থেকে চাইছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কারণ, যুবলীগে অনেকেরই শ্রম ও ঘাম রয়েছে। বিরোধী দলে থাকার সময় আন্দোলন করেছিলেন তারা। মূল্যায়িত হননি এখনো। এ কারণে ৭-৮ মাস আগেই সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকায় ঢাকায় পাঠানো হয়।
পদ প্রত্যাশী নেতারা জানিয়েছেন, যুবলীগে পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীর সন্নিবেশ ঘটাতে বর্তমান দায়িত্বশীল নেতারা শুরু থেকে কাজ করছে। এ কারণে বিতর্কিত নেতাদের আগে থেকেই বাদ দিয়ে প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়। কিন্তু গ্রুপ, উপ-গ্রুপ হিসেবে এতে অনেকেই এসে অন্তর্ভুক্ত হতে চাইছেন। এ কারণে কয়েক দফা কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। জেলা ও মহানগর নেতারা ঢাকায় গিয়ে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর নেতারা সিলেট যুবলীগের দুটি ইউনিটে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে নানাভাবে লবিং করেন। এসব লবিংয়ের কারণে সিলেট যুবলীগের দুটি ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়।
তবে- এবার সিলেট যুবলীগে যাদেরকেই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তাদের যাচাই-বাছাই করে করা হচ্ছে। আর যাচাই-বাছাইয়ে কেন্দ্রীয় নেতারাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। জেলা যুবলীগ নিয়ে ততোটা সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিলেটের নেতারা।কমিটি প্রায় চূড়ান্ত। সব গ্রুপের নেতাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি।
তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা অনেক আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি। আর এতে যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তারা অনেকেই ত্যাগী ও পরীক্ষিত। দীর্ঘদিন ধরে তারা যুবলীগ করছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মাধ্যমে তারা মুল্যায়িত হবেন।’
তিনি জানান, ‘প্রায় ২ বছর করোনার কারণে কিছুই করা যায়নি। এরপর বন্যা। এসব কারণে পিছিয়েছে। এখন যেহেতু সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে, সে কারণে জেলা যুবলীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবে। কেন্দ্রীয় নেতারাও সিলেট যুবলীগের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক।’
মহানগরের প্রস্তাবিত কমিটিতে তেমন কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন মহানগর সভাপতি আলম খান মুক্তি। তিনি জানান, ‘মহানগরেও ত্যাগী নেতাকর্মীদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। কেন্দ্রের নেতারা প্রস্তাবিত কমিটি যাচাই-বাছাই করেছেন। এখন যেহেতু শোকের মাস আগস্ট চলছে, এ কারণে এই মাসে কমিটি ঘোষণা করা হবে না। সেপ্টেম্বরে ঘোষিত হতে পারে পূর্ণাঙ্গ কমিটি।’
শেয়ার করুন