আট অভিযোগে সিকৃবি রেজিস্ট্রার শোয়েবকে ভিসির শোকজ

সিলেট

শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে না থাকাসহ আটটি অভিযোগে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা।

বুধবার (১০ মে) দুপুরে রেজিস্ট্রারকে শোকজের চিঠি দেন উপাচার্য। চিঠিতে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে উপাচার্যের সঙ্গে অসৌজন্যতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ধারাবাহিক অসহযোগিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে সাত দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে দেওয়া অপর একটি অবহিতকরণ চিঠিতে রেজিস্ট্রারকে আগামী ১ জুন থেকে ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থানের জন্য বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান করার কথা রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলামের। ২০১৩ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারে অধ্যাপক ও সমমানের কর্মকর্তাদের জন্য অনেকগুলো বাসা ফাঁকা থাকার পরও তিনি থাকছেন না।

তবে রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এসবের কোনো সত্যতা নেই।’ এ বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান। এসব ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি অসৌজন্যমূলক ও শিষ্টাচারবহির্ভূত। এ ছাড়া উপাচার্যের বাসভবনে ওঠার সময় প্রয়োজনীয় জনবল রদবদল করতে উপাচার্যকে সহযোগিতা করেননি রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম। কার্যালয়ে আসা-যাওয়ার তথ্য উপাচার্যকে কখনোই অবহিত করেন না তিনি।

এমনকি মধ্যাহ্নবিরতির পর কার্যালয়ে অবস্থান না করার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত উপাচার্য অনুমোদন দেওয়ার পরও সেগুলোর চিঠি জারি ও পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করেন এবং জারি করা চিঠি যথাসময়ে বিতরণ করার ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নেন না রেজিস্ট্রার।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিভিন্ন বিষয়ে আবেদন করে থাকেন। কিন্তু অনেক আবেদনই যথাসময়ে উপস্থাপন করেন না বা এ ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেন না রেজিস্ট্রার। এমনকি কোনো কোনো আবেদন উপাচার্যের কাছে উপস্থাপনই করেন না। এ ছাড়া প্রায়ই নথি যথাসময়ে উপাচার্যের সচিবালয়ে পৌঁছানো হয় না। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নথি উপস্থাপন করার জন্য বারবার নির্দেশনা দিলেও রেজিস্ট্রার তা এড়িয়ে যান। উপাচার্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে কোনো নথি দেখতে চাইলেও তিনি তা সরবরাহ করেন না।

তাঁর এসব কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৬ ও কর্মচারী (দক্ষতা ও শৃঙ্খলা) বিধি পরিপন্থী হওয়ায় কেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে নোটিশে।

শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী একজন আইনজীবী। তাঁর বয়স হয়েছে। তাঁর ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস থেকে যাতায়াত করা খুব কঠিন। তাই আমি শহরে থাকি। তবে যেখানে থাকি, সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না। ফলে দ্রুতই আমি অফিসে যেতে পারি। এ কারণে অফিসের কোনো কাজেই ব্যাঘাত ঘটে না। অন্যান্য উপাচার্যের সঙ্গেও কাজ করেছি। তাঁরা এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। ক্যাম্পাসে রেজিস্ট্রারের আলাদা কোনো কোয়ার্টারও নেই।’

অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমি নিয়মিত অফিসে যাই। এতে কোনো কমতি নেই। যদি না যেতাম, তাহলের অফিসের কার্যক্রম চলে কীভাবে? এসব ভুয়া অভিযোগ। আর ছুটির দিনে বা অফিস ছুটি শেষে আমি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিই। এতে অফিশিয়াল কোনো কাজে ব্যাঘাত ঘটে না। জরুরি কাজ থাকলে উপাচার্যকে বলে আসি। উপাচার্য হওয়ার পর তিনি (উপাচার্য) যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিয়েছেন বা টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছেন, তা আমাকে জানানো হয়নি। তাই যাওয়া হয়নি।’

এদিকে আরেক অবহিতকরণ চিঠিতে রেজিস্ট্রারকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

ওই চিঠিতে উপাচার্য উল্লেখ করেন, রেজিস্ট্রার ক্যাম্পাস কোয়ার্টারে অবস্থান না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে আগামী সাত দিনের মধ্যে তাঁকে অধ্যাপক ও সমমানের কর্মকর্তাদের ফাঁকা বাসার যেকোনো একটি পছন্দ করতে বলা হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *