আল্লামা ইবনে আবীদীন শামী রহ. ইবনুল হুমামের “তাহরুরীল উসূল”এর হাওয়ালায় লিখেন:

ইসলাম ও জীবন

إذ لا خلاف في كفر المخالف في ضروريات الإسلام من حدوث العالم وحشر الأجساد ونفي العلم بالجزئيات وإن كان من أهل القبلة المواظب طول عمره على الطاعات كما في شرح التحرير
অর্থাৎ দ্বীনের আত্যাবশ্যকীয় বিষয়কে যারা অস্বীকার করবে, তাদের কুফরীর ব্যাপারে করো কোন মতানৈক্য নেই। যদিও সে আহলে কিবলা। সারা জীবন আল্লাহর আনুগত্য করছে। (ফতোয়া শামী, ৪/২৪৩ দারুল কুতুবিল আরাবী।)
আল্লামা ইবনে নুজাইম মিশরী বলেন:
فالحاصل أن المذهب عدم تكفير أحد من المخالفين فيما ليس من الأصول المعلومة من الدين ضرورة ،
দ্বীনের মূল উসূল ব্যতিত যদি অন্য কোন বিষয়ে মতানৈক্য করে, তাহলে তাকে কাফের বলা হবেনা।( আল বাহরুর রায়েক, ৩/৪০১ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়রুত।)
ইলমে আকায়িদের প্রসিদ্ধ কিতাব “আল মাওয়াকিফ” এর মধ্যে রয়েছে:
“لايكفر أهل القبلة إلا فيما فيه انكار ما علم مجيئه به بالضرورة أو اجمع عليه كإستحلال المحرمات.
অর্থাৎ আহলে কিবলাকে কাফের বলা হবেনা। তবে যে দ্বীনের আত্যাবশ্যকীয় বিষয়কে অস্বীকার করবে, যে বিষয়ে সকলে ঐক্যমত, তাহলে তাকে কাফের বলা হবে। যেমন কেউ হারামকে হালাল মনে করল। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, ১/১০৫)
“কুল্লিয়াতে আবুল বাকা” এর মধ্যে রয়েছে:
“فلا نكفر أهل القبلة ما لم يأت بما يوجب الكفر وهذا من قبيل قوله تعالى إن الله يغفر الذنوب جميعا مع أن الكفر غير مغفور ومختار جمهور أهل السنة من الفقهاء والمتكلمين عدم إكفار أهل القبلة من المبتدعة المأولة في غير الضرورة لكون التاويل شبهة كما في خزانة الجرجاني والمحيط البرهاني وأحكام الرازي وأصول البزدوي. وراه الكرخي والحاكم الشهيد عن الإمام أبي حنيفة والجرجاني عن الحسن بن زياد وشارح المواقف والمقاصد ولأمدي عن الشافعي والأشعري لا مطلقا.
অর্থাৎ আমরা আহলে কিবলাকে কাফের বলবোনা। যতক্ষণ পর্যন্দ তাদের থেকে কুফরকে ওয়াজিবকারী কোন কাজ প্রকাশ পাবেনা। এটার উদাহরণ হল: যেমন আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন “আল্লাহ সমস্ত গোনাহকে মাফ করে দেন” অথচ তিনি কুফরকে মাফ করেননা। আর আহলে সুন্নাহ এর অধিকাংশ ইমামদের বক্তব্য হল: যে বেদয়াতী দ্বীনের আত্যাবশ্যকীয় বিষয় ছাড়া অন্য কোথাও তাবীল করবে, তাকে কাফের বলা হবেনা। যেমনটা আছে! খিজানাতুল জুরজানী” ও “মুহিতুল বুরহানী”, আহকামে রাযী” এবং “উসূলে বাযদাভী”তে। আর ইমাম কারখী এবং হাকিম শাহীদ রহ. ইমাম আবু হানীফা থেকে এমনটা রেওয়ায়াত করেছেন। আর জুরজানী হাসান ইবনে জিয়াদ থেকে এবং আমুদী, মাওয়াকিফের ব্যাখ্যাকার ইমাম শাফেয়ী এবং আশআরী রহ. থেকে এমনটি রেওয়ায়াত করেছেন। (কুল্লিয়াতু আবুল বাকা, পৃষ্টা নং, ৫৫৪)
শরীয়তে একজন ‘আহলে কিবলা’-কে কাফের, মুরতাদ ফতোয়া দিতে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করেছে! নফসের সাথে জিহাদ বড় জিহাদ, শালিনতার সাথে নিজেকে আবৃত রাখলে হিজাবের প্রয়েজান নেই এমন বক্তব্য কেউ দিলে আপনার ইলম অনুযায়ী তাঁর পর্যালোচনা করার অধিকার অবশ্যই রয়েছে! হিজাবের বিষয়টি অন্তত ভাইয়েরা আল্লামা যাহিদ কাউসারী রহ. এর লিখিত মাকালা ‘হিজাবুল মারআহ’ এবং আবু মুয়াজ তারেক বিন আউযুল্লাহ এর কিতাব “النقد البناء لحديث أسماء في كشف الوجه والكفين للنساء” বইটি পড়ার অনুরোধ থাকলো।
ইলমের সাথে সামান্য সম্পর্ক রাখে, তারা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর নাম শুনেছে। যারা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এর লিখিত ‘আদ দুরারুল কামিনাহ’ (১/১৪৪-১৬০) থেকে তাঁর জীবনী পড়েছেন, তারা জানেন ইবনে তাইমিয়া রহ. এর যাল্লাতের কথা। তাহকীকের নামে তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা পূববর্তী কারো থেকে বর্ণিত হয়নি। আল্লামা যাহিদ কাউসারী রহ. এর লিখিত “আস সাইফুল সাক্বীল ফির রাদ্দি আলা ইবনে যাফিল’ যারা দেখেছেন, তারা হয়তো ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বিচ্যূতি কত মারাত্মক তা আঁচ করতে পেরেছেন। শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী দা.বা. তাঁর লিখিত সফরনামা ‘সফর দর সফর’ (৮৭-৮৯) এ সংক্ষিপ্ত হলেও অত্যান্ত তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে।
আল্লাহ রহম করুন শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার উপর, যদি তিনি মিযযী, যাহাবী, ইবনুল কায়্যিম এবং ইবনে কাসীরের যুগে না হয়ে বর্তমানের আল্লামাদের যুগে হতেন, তাহলে ফতোয়ার কি ঝড় তাঁর উপর বয়ে যেতো!
একজনের কার্যকলাপ আপনার কাছে ভালো না লাগতে পারে! তাকে মনে হতে পারে গাদ্দার! আপনি থাকে ইচ্ছামত গালিগালাজ করেন! কোন সমস্যা নাই! কিন্তু কাউকে নাস্তিক, মুরতাদ ফতোয়া দেওয়ার আগে অন্তত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীসটি মনে রাখবেন:
أجرأكم على الفتيا أجرأكم على النار

 

অর্থাৎ যারা দ্রুত ফতোয়া দেয়, তারা দ্রুত জাহান্নামে যাবে। (সুনানে দারেমী, হাদীস নং ১৫৭)
মাওলানা নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ.কে আশা করি সবাই চিনেন। তাহকীকের ক্ষেত্রে উনি ইমাম বুখারী থেকে শুরু করে কাউকে সমালোচনা থেকে বাদ দেন নাই ইমাম বুখারী, আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমীযীর কিতাবকে দুই ভাগে ভাগ করে তিনি তাঁদেরকে হাদীস শিখিয়েছেন! আশ্চর্য কথা হলো: যিনি ইমাম বুখারী, মুসলিমদের মতো মহান জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের সমালোচনাকে জায়েয মনে করতেন, কিন্তু তাঁর সমালোচনা কেউ করুক এটা তিনি সহ্য করতে পারতেননা। আলবানী রহ. এর লিখিত ‘সিফাতু সালাতিন নাবী’ এর ভূমিকা যারা পড়েছেন, আশা করি তাঁদের নিকট বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি কী বিশ্রী ভাষায় তাঁর পর্যালোকদের বকেছেন!
ফেইসবুকে ইদানিং কিছু সেলিব্রেটি এ রকম দাঁত গজিয়েছেন! যারা সর্বক্ষণ অন্যের সমালোচনা এবং পর্যালোচনা নিয়ে ব্যস্থ! কিন্তু যখন তাকে অথবা তাঁর দলের কাউকে নিয়ে কেউ লেখে, তখন তিনি চেতনার ফেরি করে বেড়ান! তখন নসীহত করেন আমাদের মুখে বড়দের সমালোচনা মানায়না! আল্লাহ তুমি আমাদের রক্ষা করো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *