ওয়ান ইলেভেনে ক্ষমতায় বসাতে মিলিটারি সারা রাত আমার বাসায় বসে ছিল: ড. ইউনূস

জাতীয়

যদি ক্ষমতা চাইতাম তখন যখন (২০০৭ সালে) মিলিটারি আমার বাসায় এসে বসে রইল সারা রাত, আমাকে রাজি করানোর জন্য, আমি তো লুফে নিতাম’—বলে জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি ৷

ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় অনুষ্ঠানে গতকাল শুক্রবার দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা, নিজের বিরুদ্ধে চলমান মামলাসহ নানা প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূস।

সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাকে রাজি করানোর জন্য বসে (সেনাবাহিনীর) থাকতে হবে কেন, আমি যদি ক্ষমতাই চাইতাম তা হলে বলতাম চলেন চলেন কোন জামাটা পরতে হবে, এখনই যাচ্ছি। আমি তো সেটা করিনি, তাদের সঙ্গে তর্ক করেছি সারা রাত ধরে। যে না ভাই আমাকে দিয়েন না, আমি এ কাজে উপযুক্ত না। আপনারা অন্য লোক খোঁজেন।’

প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘তারা আমার ওপর মন ঠিক করে ফেলেছে, আমাকেই নিতে হবে। আমি বারেবারে বলতেছি তাদের, তারা নিরাশ হয়ে চলে গেল। সকাল বেলা আবার আসব তখন আপনি আমাদের বইলেন যে রাজি আছেন, আমি বললাম না সকাল বেলা আসলে একই কথা পাবেন, এমন কিছু না যে আমি মনের মধ্য দ্বন্দ্ব রেখে বলছি, আমি পরিষ্কারভাবে বলছি। কে ছাড়ে! আপনাকে দেশের সরকারের প্রধান বানাতে আহ্বান জানাচ্ছে, বাংলাদেশে এমন কয়জন আছে? যে বলবে আমি এ দায়িত্ব গ্রহণ করব না।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস ও সামাজিক ব্যবসা পরিচালনার আমন্ত্রণ থাকলেও তিনি কেন বাংলাদেশে থাকছেন সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস বলেন, ‘তুমি কি বলছ আমি দেশ থেকে চলে যাই? এমন কুসন্তান হলাম আমি যে আমাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে? আমি এই দেশের সন্তান, এই দেশেই থাকব।’

সামাজিক ব্যবসা ও উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে ১২ থেকে ৩৫ বছরের জনগোষ্ঠীকে উৎসাহ দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের জন্ম হয়েছে চাকরি করার জন্য না। আমরা সবাই উদ্যোক্তা।’

গণতন্ত্র নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা কেউ গণতন্ত্রের বিপক্ষে না, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, ন্যায়-নীতির পক্ষে ৷ এগুলো না থাকলে তো জাতি হিসেবে আমরা টিকে থাকব না।’

তবে মুখ খুলে মানুষ গণতন্ত্রের কথা বলতে পারছে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমার মনে হয়, উনি মনে করেন আমি দেশের সর্বোচ্চ ডাকু, সন্ত্রাসী কিংবা আমি অপরাধী, সেরা চোর ৷ আমাকে বলেন আমি সুদখোর, ঘুষখোর।’

কর ফাঁকি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমার টাকা, আমি রোজগার করি, আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি মালিক হব না। যেহেতু আমি মালিক হব না, তাই আমি ট্রাস্টে দিয়ে দিতে চাচ্ছি ৷ আমাদের আইনজীবী বলেছেন, আপনি যেহেতু দান করছেন, এটাতে আর কর দেওয়ার কোনো বিষয় নেই।’

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর দিতে বলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস কর পরিশোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন ৷

প্রচলিত আইন অনুসারে প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের ৫ শতাংশ কর্মীদের দেওয়ার বিষয়ে এই বিশ্ব-ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘যেখানে মালিক মুনাফা পায় না, সেখানে শ্রমিক কীভাবে মুনাফা পাবেন? এই প্রতিষ্ঠান তো মুনাফা তৈরি করে না।’

দেশের টাকা বিদেশে পাচারের ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ৷ আইনটা প্রয়োগ করতে হবে তো। সমস্ত বিষয়টা আইনের ব্যাপার।’

সাম্প্রতিক সময়ে প্রফেসর ইউনূস সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর প্রতিষ্ঠান জবর দখল হওয়ার কথা জানান ৷ এই বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা ভয়ের মধ্যে আছি। আমাদের বিল্ডিংয়ের সামনে দলীয় লোকজন সভা করছে ৷ আমরা খুবই সংকটময় অবস্থার মধ্যে আছি।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *