কামরান-আরিফ বিহীন প্রথম ভোট

সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। সর্বত্র ভোটের আমেজ। তবে এই প্রথমবার নির্বাচনে নেই বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট সিটির সর্বশেষ চার নির্বাচনের সবগুলোতেই মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন কামরান। আর আরিফুল হক চৌধুরী একটিতে কাউন্সিলর পদে এবং দুটিতে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন।

২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০০৩ সালের মার্চ মাসে মুহাম্মদ আবদুল হককে পরাজিত করে তিনি সিলেট মহানগরের প্রথম মেয়র হন। ওই নির্বাচনে ২০ হাজারের বেশি ভোটে কামরান বিজয়ী হন। ২০০৮ সালে কারাবন্দি থাকা অবস্থায় মেয়র নির্বাচন করে দ্বিতীয় বার জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৮৩ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এরপর কামরান ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ১৫ জুন মৃত্যু হয় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এ সভাপতির।

এমন বাস্তবতায় এবারের নির্বাচনে তার বিকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামানকে।

অন্যদিকে সিলেটের বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী ২০০৩ সালে তিনি কাউন্সিলর হিসাবে নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তিনি সিটি করপোরেশনের নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে এবার নিজের দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তিনি প্রার্থী হননি।

এবারের নির্বাচনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর শূন্যতা অনুভব করছেন ভোটাররা। কারণ তারা দুজন দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষের প্রিয়জন হয়ে ওঠেছিলেন।

এবার নগরের যুক্ত হয়েছে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড।

আলাপকালে ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মোল্লা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘‘কামরান-আরিফের মতো মেয়র সিলেটে আসবেন কি-না জানি-না। কামরান আহমদের সাথে সাধারণ মানুষ সব সময় কথা বলতে পারত। তাই তাকে জনতার কামরান বলা হতো। উন্নয়নও করেছেন। আরিফুল হকও অনেক উন্নয়ন করেছেন। এই নগরে অনেক বিশৃঙ্খলা ছিল। তার সময়ে এগুলো ঠিক হয়েছিল।’’

নগরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুজাত আহমদ বলেন, ‘‘আমরা নগরে নতুন ভোটার হয়েছি। পুরোনো কোনো প্রার্থী নেই এবার। নতুন প্রার্থী সবাই। কাকে ভোট দেব, এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’’

সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিকশা চালক নিশি কান্ত দাস। এই নগরের প্রথম থেকেই তিনি ভোটার। সব নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। কামরান-আরিফ ছাড়া প্রথম ভোটের প্রসঙ্গ তুলতেই চোখ ছলছল করে ওঠে নিশি কান্তের।

তিনি বলেন, ‘‘চার নির্বাচনে কামরান ভাইকে ভোট দিছি। আমরা তো তানোরে (তাকে) ভাই হিসেবে ডাকতাম। কান্দাত (কাছে) গেলেই জড়িয়ে ধরতেন। ইবারের ভোটে তানোরে খুব মনে পড়ের।’’

নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাব্বির আহমদ বলেন, ‘‘কামরান-আরফি ছাড়া নির্বাচন জমছে না। ইবারের নির্বাচন একেবারে সাদামাটা ওর। কামরান ভাই মারা যাওয়ায় তাইন তো আর নির্বাচন করতে পারতা নায়। তবে আরিফুল হক নির্বাচন করলে ইবার ভোট খুব জমতো। এখনতো একতরফা ভোট অর।’’

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘‘যেহেতু দল নির্বাচন নেই, তাই আমাদের কোনো ধরনের আগ্রহ নেই। তবে এটা একতরফা নির্বাচন হচ্ছে।’’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আসাদ উদ্দিন বলেন, ‘‘কামরান ভাই অমায়িক মানুষ ছিলেন। আমরা রানিং মেট ছিলাম। কামরান ভাই যখন সভাপতি আমি সেক্রেটারি ছিলাম। কামরান ভাইয়ের সাথে বোঝাপড়াটা ভালোই ছিল। একসাথে কাজ করেছি। স্বাভাবিকভাবে একটা শূন্যতা বিরাজ করতেছে। এখনও তাকে মনে হচ্ছে, কামরানভাই থাকলে নির্বাচন করলে অথবা না করলে দলের নেতা হিসেবে একটা ভূমিকা রাখতা। তার এই সার্ভিস থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। তিনি তো আর পৃথিবিতে নেই। শুধু নির্বাচন নয়, মিছিল-মিটিং হলেই কামরান ভাইয়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

‘‘বিশেষ করে আমি বেশি তার শূন্যতা অনুভব করছি। কারণ দলীয় কর্মসূচিতে তার পরামর্শ নিতাম। শুধু দল নয়, সাধারণ মানুষও তার শূন্যতা অনুভব করছে।’’

আসাদ উদ্দিন আরও বলেন, ‘‘তবে এবারের নির্বাচনে আমাদের নতুন প্রার্থী। নৌকার প্রার্থী মানুষ হিসেবে অত্যন্ত চমৎকার। তার আচার-আচরণে সকলেই মুগ্ধ হন। তার সততা নিয়েও দেশে-বিদেশে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। আমরা আশাবাদী তিনি নির্বাচিত হবেন। সে লক্ষ্যে আমরা সকলেই কাজ করেছি।’’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *