জাফলংয়ে অবৈধ ক্রাশার মেশিনের থাবায় নিধন বনাঞ্চল, নিরব বনবিভাগ

সিলেট

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধিঃ

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং বনবিট এলাকায় চলছে প্রায় শতাধিক ক্রাশার মেশিন। সরকারি কোন অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর চলে আসলেও নির্বিকার বনবিভাগ। ফলে ক্রাশার মেশিনের থাবায় নিধন হচ্ছে বনজ, ফলজ, ঔষুধি সহ নানা প্রজাতির গাছ। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য,আর বিলুপ্ত প্রায় পশু পাখির অভয়ারণ্য বাসস্থান। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বনাঞ্চলের ভিতরে এবং আশপাশে অবৈধভাবে এসব ক্রাশার মেশিন স্থাপন করা হলেও তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব ক্রাশার মেশিন স্থাপনা করছেন এবং নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করছেন ক্রাশার মেশিন মালিকদের কাছ থেকে। সংরক্ষিত বনের ভিতর বা আশেপাশে পাথর ভাঙার ক্রাশার মেশিন স্থাপনের নিয়ম নেই। অথচ উপজেলার জাফলং বনবিট এলাকার বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ ক্রাশার মেশিন।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বনের মধ্যে এসব ক্রাশার মেশিন স্থাপনের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। জাফলং বনবিট এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, মিল মালিকরা সরকারি কোন নিয়ম মানছেন না। অনেকেই বছরের পর বছর বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চালাচ্ছেন অবৈধ এসব পাথর ভাঙ্গার ক্রাশার মেশিন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সারী রেঞ্জের অধীনে জাফলং বনবিট এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস করে নতুন করে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০/১২টি অবৈধ ক্রাশার মেশিন সহ অসংখ্য বসত ঘর স্থাপন করে মোহাম্মদপুর এলাকায় মহাসড়কের পাশে বনের জায়গা দখল করে আছেন অনেকেই। ক্রাশার মেশিনে প্রতিদিন ভাঙ্গছে পাথর, অন্যদিকে সারী রেঞ্জ’র আওতাধীন জাফলং বনবিট কার্যালয়ের নাকের ডগায় বিট কার্যালয়ের পূর্ব পাশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নতুন করে বনের গাছ কর্তন করে দুটি ক্রাশার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। দেদারসে বনজ গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করছেন এসব ক্রাশার মিল মালিকরা। তাছাড়াও মোহাম্মদপুর, কানাইজুরী, নলজুরি, তামাবিলসহ এ বিটের অধীনে আরো অনেক ক্রাশার মেশিন রয়েছে। যেগুলো বন বিভাগের চোখে পড়ে না। এসব ক্রাশার মেশিন গুলোর একটিরও বন পরিবেশের বৈধ কাগজপত্র (লাইসেন্স) নেই। সবই স্থানীয় বিটে মাসোহারা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে চালিয়ে আসছে মিল মালিকরা।

অবৈধ ক্রাশার মেশিনের জন্য বনাঞ্চলের কোন গাছপালা রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা । জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। তবে এই নিদের্শনা কেউ মানছে না। যত্রতত্র বসানো হয়েছে ক্রাশার মেশিন। দিনে রাতে প্রকাশ্যে ভাঙ্গা হচ্ছে পাথর। এ যেন বনাঞ্চল ধ্বংসের হিড়িক পড়ে গেছে ‌‌।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন জানান, খবর পেয়ে আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি, স্থাপনা আর ক্রাশার মিল আগের বসানো ছিল। তবে বন ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে তিনি একথা স্বীকার করে বলেন, জরুরী ভিত্তিতে এইগুলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্হানীয় বিট কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত করে তাদের মধ্যে কারো সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *