নগরপিতা হওয়ার দৌড়ে প্রার্থীরা

সিলেট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : আগামী ২১জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিকি) নির্বাচন। নির্বান মনোনয়ন ও ভোটাভোটির এখনো আড়াইমাস বাকি।

এর আগে গত প্রায় ৩ মাস থেকে মেয়র পদে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা ও নির্বচনী মহড়া পরিলক্ষিত হচ্ছে । বিশেষ করে শাসকদল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে প্রায় এক ডজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। ইসির তফসিল ঘোষণার একদিন আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য সিসিক’র বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডনে ছুটে গেছেন।

জাতীয় পার্টির লাঙ্গল পেতে তিন জনের নাম আলোচিত হচ্ছে। এছাড়াও মাঠে আছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। পাড়া-মহল্লায় সমানতালে চলছে তাদের তৎপরতা ও মহড়া । আসন্ন নির্বাচন হবে সিসিকের ৫ম নির্বাচন।

জানা গেছে, সিসিক নির্বাচনে শাসকদলেল নৌকার মাঝি হতে আওয়ামী লীগের প্রায় একডজন নেতা সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে রাখছেন।

সিলেট নগরীর অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়ক ও মোড়ে মোড়ে এ সকল নেতাদের প্রার্থিতার ছবি সম্বলিত সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড সাটানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব রয়েছেন এ সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থক নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা নিজেদের তুলে ধরছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে সিলেটকে স্মার্টসিটি করার ব্রতী হয়ে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন। জুমার দিনে মসজিদে মসজিদে গিয়ে মুসল্লীদের কাছে দোয়া চাইছেন। ছুটে যাচ্ছেন আশীর্বাদ নিতে মন্দির ও গীর্জায়।

নৌকার মাঝি হতে ঘোষণা দিয়ে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক ও প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পুত্র ডা.আরমান আহমদ শিপলু, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও যুগ্ম সম্পাদক সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট মহানগর ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক, আওয়ামী লীগ নেতা প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী ও যুবলীগের লয়লুছ চৌধুরী।

২০২০ সালের ১৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাবেক কামরান ইন্তেকাল করেন। জনপ্রিয় এই নেতার মৃত্যুর বছর খানেক পর সিসিকের মেয়র পদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজনকে মাঠে নামতে দেখা যায়। সিলেট নগরীতে যখন এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন এরই মধ্যে গেল ২২ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঘটা করে সিলেটে এসে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাশার ঘোষণা দেন।

অবশ্য এখনো দলীয় নীতি নির্ধারনী ফোরাম সিলেট সিটি কর্পোরেশনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেনি। তবে, নৌকা পেতে প্রত্যাশীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রে কেউ কেউ জোর তদ্বির করছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, হারানো মেয়র পদ পুনরুদ্ধারে এবার শক্তিশালী প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ। সিলেট নগরীতে দেয়া সরকারের বিপুল পরিমাণের উন্নয়ন বরাদ্দের বিষয়টিও ভোটারদের মাঝে তুলে ধরা হবে।

এদিকে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এই হিসেবে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আসন্ন সিসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। তবে, কর্মী-সমর্থকদের চাপে শেষ পর্যন্ত আরিফ মেয়র পদে প্রার্থী হবেন বলেও নগরীতে গুঞ্জন রয়েছে। গেল পরশু তিনি লন্ডনে ছুটে গেছেন। এর বাইরে মেয়র পদে বিএনপির আর কারো নাম শোনা যাচ্ছে না।

জাতীয় পার্টির লাঙ্গল পেতে প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর নানা শোনা যায়। তার ছবি সম্বলিত সাইনবোর্ড-ব্যানারও সাটানো হয়। এরপর ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বাবুলের নামেও সাইনবোর্ড-ব্যানার সাটানো হয়েছে। জাপা নেত্রী শিউলী আক্তারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাই কে হচ্ছেন লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী তা এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানা গেছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।দলের সিলেট মহানগর কমিটির সেক্রেটারী মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে (এলএলবি) হাতপাখার প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে সংগঠনটি ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র হিসেবে আরও প্রার্থী মাঠে নামবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

আগে কেবল সিলেট নগরীর ২৭ ওয়ার্ডে ভোটের লড়াই চললেও এবার সীমানা বর্ধিত হওয়ায় পরিধি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ওয়ার্ড সংখ্যা এখন ৪২টি। নতুন-পুরাতন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা আগেভাগে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যান। তফসিল ঘোষণার ফলে সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে সিলেট পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার টানা ১২৪ বছর পরে ২০০২ সালের ২৮ জুলাই প্রতিষ্ঠা হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
সিসিক প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৯ বছর পর ২০২১ সালে সিসিককে বর্ধিত করা হয়। বর্তমানে সিসিকের মোট আয়তন ৫৯ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার। নতুন করে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড বেড়েছে। নতুন ও পুরাতনসহ সিসিকের মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৪২টি। পুরনো ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডসহ বর্তমানে মোট সংরক্ষিত ওয়ার্ড হচ্ছে ১৪টি।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিসিকের ৪র্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। ধানের শীষে আরিফের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯২ হাজার ৫৯৩ আর কামরান নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৮৬ হাজার ৩৯৭ ভোট। এরপর ৭ নভেম্বর সিসিকের নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *