নগরে নিয়ন্ত্রণহীন বেওয়ারিশ কুকুর

সিলেট

মুনশী ইকবাল : সিলেট নগরে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত। দিনে বিচরণ কম চোখে পড়লেও বিকেল গড়াতেই বাড়ছে সংখ্যা। আর রাত নামতেই ব্যস্ত রাস্তা চলে যায় কুকুরের দখলে। নগরের বিভিন্ন অলিগলি ও সড়কে কুকুরের চিৎকার আর চেঁচামেচিতে রাতের নিস্তদ্ধতা ভাঙছে। ক্ষুধার্ত কুকুর হামলে পড়ছে পথচারীর ওপরও। এ নিয়ে আতঙ্ক, ক্ষোভ দুটোই আছে নগরবাসীর। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে অসহায় তারা।

সিটি করপোরেশ বলছে, নগরে ২ হাজারের মতো কুকুর রয়েছে। গতবছর ১৮শ’ কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকে বলছেন, সিটি করপোরেশনের হিসেবের চেয়ে কুকুরের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া দিন দিন কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে, কুকুর আতঙ্কে সকালে বাচ্চারা স্কুলে যেতে ভয় পায়, ফজরের সময় মুসল্লিদের নামাজে যেতে বেগ পেতে হয়। রাতবিরাতে আক্রান্ত হন পথচারীরা।

নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা প্রায় সময় বলেন, বিশ্বের কোনো সভ্য দেশেই রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে কুকুর ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় না। এটা শিশু, নারী, বয়স্ক এমনকি প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য অসুবিধার হতে পারে। তারা ভয় পেতে পারে।
কুকুরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ অনেকে জানান, কুকুরের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আগে দিনে কুকুর তেমন একটা দেখা না গেলেও এখন দিনে দুপুরেও কিছু কিছু কুকুর বসে থাকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে কিংবা মার্কেট বা বাড়ির গেইটের ছায়ায়। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় দল বেধে অবস্থান নেয় রাস্তায়। বেশিরভাগ কুকুরই বেওয়ারিশ। তবে এর সাথে কারও কারও পোষা কুকুরও রয়েছে।

বেওয়ারিশ কুকুরগুলো রাতে ঘেউ ঘেউ শব্দে পাড়া মাথায় তোলে। রাতে কেউ পাড়ায় পথ চলতে গেলে কয়েকটি কুকুর এসে পথ আগলে রাখে। নতুন কেউ এলে কুকুরগুলো আরো আক্রমনাত্বক হয়ে যায়। কেবল যে পায়ে হাঁটা পথিক কুকুরের আক্রমণের শিকার, তা নয়। মোটরবাইক আরোহীর ওপরও কুকুর চড়াও হয়।

অনেক ভুক্তভোগী জানান, বর্তমানে নগরীতে বেওয়ারিশ কুকুরের মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন অলি-গলি ২০-৩০টি কুকুর দল করে দখল নিয়েছে, যা অত্যন্ত ভীতিকর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুকুরের লালায় র‌্যাবিস ভাইরাসের জীবাণু থাকে বলে আহত ব্যক্তির জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কুকুরে কামড়ানো ব্যক্তিকে এ রোগ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টির্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এগলো নগর কর্তৃপক্ষের কাছে যথেষ্ট আছে কি-না তা একটা বড় প্রশ্ন।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম  বলেন, আদালতের রায়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে কুকুর নিধন বন্ধ আছে। এখন শুধু ভ্যাকসিনের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা গতবছর ১৮শ’ কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েছি।

তিনি বলেন, কুকুর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই কুকুর নির্মুল সম্ভব নয়। কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে খামারের কথা চিন্তা করা যায়। যদি কুকুরের খামার করে তাদের সেখানে রাখা যায় তবে কুকুরের এই উপদ্রব সামাল দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এটা অনেক বৃহৎ পরিকল্পনার ব্যাপার যা আমাদের মতো ছোটো সংস্থার ক্ষমতার বাইরে।

২০১৯ সালে করা প্রাণী কল্যাণ আইন বলছে, মালিকানাবিহীন কোনো প্রাণি নিধন বা স্থানান্তর দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া ২০১৪ সালে একটি প্রাণিপ্রেমী সংগঠনের রিট আবেদনের প্রেেিত কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালতেরও।

এই রায়ের কারণেই থমকে আছে কুকুর নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু এবার দাবি উঠেছে, কুকুর নিয়ন্ত্রনের। অনেকে বলছেন পারিবেশবাদীনগরে  কুকুর নিয়ে কথা বলছেন তারা শুধু কুকুর নিয়েই চিন্তা করে, মানুষ নিয়ে এদের চিন্তা নেই। অথচ মানুষ এবং প্রাণি দুই নিয়েই সমাজ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালতের রায়ের কারণে কিছু করা যাচ্ছে না। কিন্তু দিন যতো যাচ্ছে অবস্থা ততোই গুরুতর হচ্ছে। কুকুর উপকারী প্রাণি কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে উপকারী প্রাণি অপকারের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *