নতুন নির্বাচনের আহ্বান: ৬ সংগঠনের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান সরকারের

জাতীয়

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ছয়টি নাগরিক সংগঠনের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। ওই বিবৃতিতে তুলে ধরা অভিযোগগুলোকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সরকার নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানকে অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে।

গতকাল শনিবার (১৩ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেসব সংস্থার বিবৃতিতে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন দেশ ভূয়সী প্রশংসা করেছে। নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে তারা। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, উৎসবমুখর পরিবেশে এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী এবং ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এতে কোনো কোনো জায়গায় বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ভোটদানের হার ৭০ শতাংশ বা সেটার চেয়েও বেশি। তবে শহর এলাকায় তুলনামূলকভাবে কম ভোটার উপস্থিতির কারণে সারাদেশে গড় ভোটের হার ছিল ৪১.৮। অর্থাৎ প্রায় ৪২ শতাংশ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) অত্যন্ত সুষ্ঠু ও ‍সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। নির্বাচনের আগে বিএনপির সহিংসতা ও বানচাল করার হুমকি সত্ত্বেও হাতেগোনা কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ভোটের দিনটি ছিল শান্তিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক, যারা সক্রিয়ভাবে মাঠ থেকে নির্বাচনের প্রতিবেদন করেছেন, তারা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ জানিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচন সামনে রেখে সংযম এবং আইনি সীমা মেনে সহিংসতার ঘটনাগুলোর মোকাবিলা করেছে দাবি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রাজনৈতিক কারণে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়নি। নির্বাচন বানচালের জন্য যারা মানুষ ও যানবাহনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে, আগুন দিয়েছে, মানুষকে হত্যা ও আহত করেছে এবং জনজীবন ব্যাহত করেছে, তাদেরকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং সব নাগরিকের অধিকার রক্ষার জন্য এসব পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল।

তাই এই যৌথ বিবৃতি বিভ্রান্তিকর, একতরফা ও অগ্রহণযোগ্য। গণতন্ত্র বিরোধী ও নির্বাচন বিরোধী শক্তি যারা নির্বাচনকে বানচাল করার অপচেষ্টা করেছিল, তাদের উৎসাহিত করার জন্য এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে জারি করা হয়েছে বলে স্পষ্ট।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে যৌথভাবে বিবৃতি দেয় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল), ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন (সিআইভিআইসিইউএস), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), এশিয়ান ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক (এডিএন), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট (অস্ট্রেলিয়া) ও অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন)। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নির্বাচন যথাযথ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক—কোনোটিই হয়নি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসমূহ ও আন্তর্জাতিক নির্বাচনী মানদণ্ড মেনে এই নির্বাচন হয়েছে কি না, সে বিষয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *