পূর্ব সিলেটের চিকনাগুল বাজারে জমজমাট কৃষিপণ্যের হাট

সিলেট

সারওয়ার খানঃ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিকনাগুল বাজার দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বিশাল আকৃতির কয়েকটি কড়ই গাছের নিচে বসা এই বাজার এখন বিশেষভাবে জনপ্রিয় কৃষিপণ্যের হাট হিসেবে। প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার সকালে বসে এ হাট, যা এখন কৃষক ও ভোক্তার আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে।

শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এ বাজারে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন সৌখিন ক্রেতারা। আর পাইকাররা এখানে এসে সংগ্রহ করেন টাটকা ফল-সবজি।

এই হাটে পাওয়া যায় আম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা থেকে শুরু করে স্থানীয় লুকলুকি (টিপাফল), লটকন, বেতফল, লেবু জাতীয় ফলসহ নানা ধরনের দেশীয় ফল। বর্তমানে বাজার জুড়ে সাজানো রয়েছে সিলেটের বিখ্যাত জারা লেবুর পসরা, যা স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি শহর থেকেও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।
শুধু ফলই নয়, রয়েছে দেশীয় সবজিরও সমাহার-কচুর লতি, বাঁশ কোড়ল, কাঁচাকলার ছড়ি, কচু, ঝিংগা, চিচিঙ্গা, দেশি মুরগির ডিমসহ নানা ধরনের পণ্য। কৃষকেরা রাসায়নিক সার ছাড়াই নিজেদের খামারে এসব ফল-সবজি উৎপাদন করে বাজারে আনেন।
বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা একজন চাষি বলেন, বাড়িতে নিজেদের খাওয়ার জন্য সবজি ফলাই। অতিরিক্ত যা থাকে, তা হাটবারে বাজারে নিয়ে আসি। এগুলোতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করি না, তাই ক্রেতারা ভরসা করে কেনেন।

 

বিশাল আকৃতির কয়েকটি কড়ই গাছের নিচে বসা এই বাজার এখন বিশেষভাবে জনপ্রিয় কৃষিপণ্যের হাট হিসেবে।

 

স্থানীয় ব্যবসায়ী রইস উদ্দিন জানান, “হরিপুর অঞ্চলের ফল-সবজির সুনাম অনেক। টিলা এলাকার ফলের স্বাদ আলাদা। এ কারণেই হাটবারে অনেক দূর থেকেও ক্রেতারা আসেন।

চিকনাগুলের বাসিন্দা সুমন আহমদ বলেন, “চিকনাগুল বাজারে ফল-সবজির দাম তুলনামূলক কম। আবার সবই টাটকা পাওয়া যায় বলে শহর থেকেও আমার অনেক বন্ধু এখানে বাজার করতে আসেন।”

সিলেটের উপশহর থেকে আসা কামাল হোসেন জানান, আমি মূলত জারা লেবু আর হরিপুরের কাঁঠাল কিনতেই এখানে আসি। অন্য কোথাও এত ভালো পাওয়া যায় না।

ব্যবসায়ী আনোয়ার মিয়া বলেন, “হাটবারে সকাল থেকেই ক্রেতারা ভিড় জমাতে শুরু করেন। দুপুরের মধ্যেই পণ্য শেষ হয়ে যায় প্রায়। তবে হাটবার ছাড়া দেশীয় ফল-সবজির কেনাবেচা হয় না।”

শাকসবজি ছাড়াও চিকনাগুল বাজারে হাটবারে বিক্রি হয় হাঁস-মুরগি। পাশাপাশি রয়েছে গরু-ছাগলের স্থায়ী হাটও। ফলে কৃষিপণ্য ছাড়াও এখানে গড়ে উঠেছে গ্রামীণ জীবিকার বৈচিত্র্যময় এক বাজার ব্যবস্থা। হয়ে উঠেছে বিশ্বস্ত কৃষিপণ্য সরবরাহকেন্দ্র। একইসাথে হাটকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে সামাজিক মিলনমেলা, যা স্থানীয় সমাজ-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

প্রতিনিয়ত বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। কৃষকের খামার থেকে সরাসরি সংগ্রহ, তুলনামূলক সস্তা দাম, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বাজার হওয়াতে চিকনাগুল বাজার পূর্ব সিলেটের কৃষি-অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *