বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

জাতীয়

২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে— সেটিকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ৩টায় মন্ত্রণালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সোহেলী সাবরীন ব্রিফিং করেন। তিনি দাবি করেন— প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি পারফেক্ট নয়। বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০২৩ সালে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরো গত মঙ্গলবার ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস ফর ২০২৩’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।

এতে বলা হয় — ২০২২ সালের মতো গত বছরও বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানান ঘটনা ঘটেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আরও বলেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওইসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত ও শাস্তি দিতে সরকার বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় লিখিত বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সোহেলী সাবরীন বলেন, ‘২০২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মানবিধকার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নোট করেছে বাংলাদেশ। আমরা যতই আকাঙ্ক্ষা করি না কেন বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। কারণ একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে।’

বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।’

সোহেলী সাবরীন বলেন, ‘যে ক্ষেত্রগুলিতে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলি সম্পর্কে সচেতন বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে অফিসে তার টানা মেয়াদে, মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থপূর্ণ অগ্রগতি উপলব্ধি করার জন্য বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন যে, এই ধরনের প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, বয়স্ক ব্যক্তিদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, সমিতির স্বাধীনতা, স্বাধীনতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনটিতে অনেক বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে আনা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘পরিতাপের বিষয়, প্রতিবেদনে সরকারের অনেক উন্নয়ন ও অর্জনের কথা স্বীকার করা হয়নি। অন্যদিকে, বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগগুলি একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রবণতার অংশ হিসাবে পতাকাঙ্কিত করা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবেদনটির একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পাঠ এটি স্পষ্ট করে দেবে যে, এটি পৃথক রিপোর্ট করা বা অভিযুক্ত ঘটনার রেফারেন্স দিয়ে পরিপূর্ণ যা বিস্তৃত, সাধারণ অনুমানগুলি আঁকতে ব্যবহৃত হয়েছিল।’

‘এটাও স্পষ্ট যে, রিপোর্টটি বেশিরভাগ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (বেনামী উৎসসহ) থেকে নেওয়া অনুমান এবং অপ্রমাণিত অভিযোগের উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে অনেকগুলি মার্কিন সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি দ্বারা সমর্থিত। যেমন, রিপোর্টিং প্যাটার্নে কিছু সহজাত এবং স্পষ্ট পক্ষপাতগুলি বেশ স্পষ্ট,’ যোগ করেন তিনি এই মুখপাত্র।

মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এটি সঠিক নয়। কারণ, বিএনপি এবং এর রাজনৈতিক মিত্রদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও ভাঙচুরকে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা প্রায়ই সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যাহত করে এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করে। এত কিছুর পরও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অত্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’

সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক সংলাপ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেদনে এই বিষয়ে রাষ্ট্র/সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়িয়ে বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অনুরূপ শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি কেস পতাকাঙ্কিত করা হয়েছে, যেগুলো একাধিক দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে প্রাসঙ্গিক মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যথারীতি, প্রতিবেদনে অযৌক্তিক বাধার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত আইনানুগ ব্যবস্থাকে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *