শ্রমিকসংকটে হাওরে ধান কাটায় ধীরগতি

সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরে হাওরে সোনালি ধানের শীষ দুলছে। ধান কাটার ধুম পড়েছে। এবার ফলনও ভালো। প্রচণ্ড রোদে হাঁসফাঁস অবস্থা হলেও এমন আবহাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। ধান কেটে এক দিনেই গোলায় তুলতে পারছেন। মনের আনন্দে ধান কাটছেন কৃষকেরা। তবে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাওরের শ্রমিকসংকট।

কৃষিশ্রমিকের সংকট ও কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের অপ্রতুলতায় পাকা ধান কাটায় ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের আতঙ্কে দ্রুত ধান তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা।

দাসনোওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সারদা চরণ দাস বলেন, পাকা ধান হাওরে রেখে রাতে ঘুম হয় না। কখন ঝড়-শিলাবৃষ্টি আসে, বলা তো যায় না। শ্রমিকসংকট থাকায় ধীরে ধীরে ধান কাটতে হচ্ছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলামের বলেন,প্রকৃতি কখন রূপ বদলায়, তা বলা যায় না। তাই ৮০ শতাংশ ধান পাকার পর কেটে ফেলতে অনুরোধ করছি।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) উপজেলার নলুয়া, মইয়া ও পিংলার হাওর ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল হাওরজুড়ে সোনালি ধানের শিষ দুলছে। কিছু কিছু জমিতে কৃষকেরা ধান কাটছেন, আবার কিছু জমিতে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। অনেক জমির পাকা ধান শ্রমিকসংকটে কাটা হচ্ছে না। কৃষকের পাশাপাশি কিষানিরা বাড়ির আঙিনায় খলা (ধান শুকানোর জায়গা) তৈরি করে ধান শুকাচ্ছেন।

কথা হয় চিলাউড়া গ্রামের কৃষক গফুর মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, সাত হাল (৩৬০ শতাংশে এক হাল) জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। প্রতিবছর সিরাজগঞ্জ থেকে ৫০ জন কৃষিশ্রমিক আসেন ধান কাটতে। এবার না আসায় পাকা ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন গফুর। তিনি বলেন, শুকনা জমি ছাড়া সামান্য পানি থাকলে জমিতে হারভেস্টার যন্ত্র ধান কাটতে পারে না।

ভূরাখালী গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, শ্রমিকসংকট দূর করতে হারভেস্টার যন্ত্র আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। কিন্তু সামান্য পানি থাকলে হারভেস্টার যন্ত্র ধান কাটতে পারে না। তাই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

নলুয়ার হাওরে কথা হয় সিলেট মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী সুমন দাশের সঙ্গে। সুমন বলেন, ‘কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে বাবার জমিতে আনন্দ নিয়েই ধান কাটছি। কারণ, এ ধানই আমাদের সারা বছরের জীবন-জীবিকা, লেখাপড়ার খরচ জোগানের অবলম্বন।’ সুমন জানান, তাঁর মতো কয়েক শ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী হাওরে ধান কাটার কাজ করছেন।

চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বলেন, হাওরে কৃষিশ্রমিকের সংকট ও কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের অপ্রতুলতা রয়েছে। নলুয়ার হাওর এলাকার ৯০ জন কৃষক কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের জন্য এবার আবেদন করেছেন। একটি যন্ত্র বরাদ্দ পাননি।

বিষয়টি নজরে আনা হলে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, এবার ছোট-বড় ২০টি হাওরে ২০ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ধান কাটার জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০ হাজার কৃষিশ্রমিক ও ৭৫টি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি শ্রমিকসংকট দূর হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *