সিলেটে খেলার মাঠ নেই দেড় সহস্রাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

সিলেট

সিলেট বিভাগের দেড় সহস্রাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। নেই কোনো খালি জায়গা। মাঠ-সংকটে অনেকটা বন্দি হয়েই ক্লাসরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হয় শিশুদের। ফলে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা। মাঠের অভাবে বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করাও সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক- অভিবাবকরা বলছেন, ক্লাসে পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের বিকাশে আছে মাঠের প্রয়োজনীয়তা।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একসময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেখানে মাঠ ছিল, সেখানে এখন একাডেমিক ভবন। আর কোনো বিদ্যালয়ে মাঠ থাকলেও সেগুলো খুবই ছোট। বখতিয়ার বিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি করছে। সিলেট নগরীর মিরাবাজার এলাকায় কিশোরীমোহন বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই দৃশ্য চোখে পড়ে।বিদ্যালয়ের ভবনে ঢুকে সরাসরি ক্লাসরুমে চলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বইয়ের ব্যাগ রেখে বসে পড়ছে বেঞ্চে। কাজীটুলার কাজী জালাল উদ্দিন বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নেই খেলার মাঠ। একসময় বিদ্যালয়ের পাশের ফাঁকা জমিতেও খেলা করত শিক্ষার্থীরা। এখন সেখানে বহুতল ভবন। তাই বিদ্যালয়ের বারান্দায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শ্বাস নেওয়ার একমাত্র ভরসা।

সিলেট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিভাগের মোট ৫ হাজার ৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাঠ আছে ৩ হাজার ২০৩টির। মাঠ নেই ১ হাজার ৮৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সিলেট জেলার ১ হাজার ৪৭৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫৬টির মাঠ নেই। সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৪৬৭ বিদ্যালয়ের মধ্যে মাঠ নেই ৬৮৬টির। মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৪৮ বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২০টির মাঠ নেই। হবিগঞ্জের ১ হাজার ৬৬ বিদ্যালয়ের মধ্যে মাঠ নেই ৩৯৩টির।

 

সিলেট নগরীর রায়নগর সোনারপাড়া এলাকার বখতিয়ার বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন সুলতানা বলেন, স্কুলে গিয়ে ক্লাসরুমে বই রেখেই দৌড় দিতাম খেলার মাঠে। ঢং ঢং ঘণ্টা বাজলে ক্লাসে ঢুকতাম। এর পর স্যার বের হলেই আবার ছুটতাম মাঠে। স্কুল শেষে সাঁতার কাটতাম পাশের পুকুরে। সারাক্ষণ বন্ধুদের সঙ্গে হৈহুল্লোড়ে মেতে থাকতাম। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতেই মন চাইত না। কিন্তু এখনকার প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করে। কারণ, পুকুর তো দূরের কথা, এখন অনেক স্কুলে মাঠই নেই। ফলে, শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠছে খেলাধুলা ছাড়া। ব্যাহত হচ্ছে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট জেলার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে খেলার মাঠ নেই, এটি খুবই দুঃখজনক। খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে শিশু-কিশোররা ঘরে বসে যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে। তারা স্কুল থেকে ফিরেই টিভিতে কার্টুন দেখা, তা না হলে কম্পিউটার ও স্মার্টফোনে গেমস খেলা শুরু করে।

সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, আমাদের সময় বিদ্যালয় আছে মানেই একটা খেলার মাঠ ছিল। বিদ্যালয়ের মাঠে খেলে তৈরি হয়েছে বড় বড় খেলোয়াড়। এখন সব জায়গায় বহুতল ভবন। বিশ্বের কোথাও খেলার মাঠ ছাড়া বিদ্যালয় অনুমোদন দেয় না।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের তুলনায় বাইরের শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খেলতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়, সামাজিকীকরণ হয়। খেলার মাঠ ছাড়া একটি বিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে পারে না। বিশেষ প্রকল্পের আওতায় সব বিদ্যালয়ে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা উচিত।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় খেলার মাঠ সংযুক্ত করেই তৈরি করা উচিত। বর্তমানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাঠের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *