সিলেটে প্রতারক চক্রের খপ্পরে সাংবাদিক রুহিন, দুজন কারাগারে

সিলেট

সাংবাদিক রুহিন আহমদ একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কেনার ইচ্ছায় যোগাযোগ করেন পরিচিত এক অটোচালকের সাথে। তার নাম মো. সুমন আহমদ (২২)। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বীরখাই গ্রামের মৃত সামছুল হকের ছেলে। বর্তমানে কোতোয়ালী থানার হাওয়াপাড়ার ১০৩নং বাসার অধিবাসী।

এসময় অটোচালক আলামিন ও সাংবাদিক রুহিন কে নিয়ে অটোচালক সুমন যান নগরীর নয়াসড়ক এলাকার আল-হেলাল ৩০নং বাসার আব্দুন নূরের ছেলে আব্দুস সামাদ ফাহিমের (২৩) কাছে।

তিনি সেকেন্ডহ্যাণ্ড সিএনজিচালিত অটোরিকশা ক্রয়-বিক্রয় করেন।বেশ কয়েকটি সিএনজি দেখান ফাহিম তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে তিনি ভালো ও সমস্যা বিহীন অটোরিকশা (নং সিলেট থ -১১-৯৮১২) নাম্বারের গাড়ি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রিয় করেন সাংবাদিক রুহিন এর কাছে।

এ ব্যাপারে গত ১৩ মার্চ গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের একটি অঙ্গীকারনামা সম্পন্ন করে ফাহিম রুহিনের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ ও অটোরিকশা হস্তান্তর করেন। অটোরিকশাটি সার্ভেসিংয়ে নিয়ে গেলে ধরা পড়ে যে ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর পাঞ্চ করা। এরপর রুহিন আরও কয়েকটি সার্ভেসিং সেন্টারে নিয়ে গেলে একই ফলাফল জেনে তার মাথায় হাত। তিনি ফাহিম ,সুমন,আলামিনের সাথে যোগাযোগ করলে প্রথমে তারা বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন।

এভাবে কয়েকদিন কাটার পর আসে হুমকি ধমকি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তারা রুহিনকে হত্যার হুমকি দেন। তিনি আরও কয়েকদিন পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এয়ারপোর্ট থানায় দায়েরকৃত চোরাই অটোরিকশা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত একটি মামলায় (নং ৪৮/২০২৩) ফাহিম কারাগারে আর সুমন আত্বগোপনে।

এরপর ফাহিম জামিন পেয়েছেন এমন সংবাদ পেয়ে গত ৯ এপ্রিল রুহিন কয়েকজন স্বাক্ষীকে নিয়ে তার বাড়ি গেলে ফাহিম আবারও তাকে হুমকি ধমকি দিয়ে বিদায় করেন। এসময় তার বাড়িতে আরও বেশ কয়েকটি নম্বরবিহীন অটোরিকশাও তারা দেখে ভিডিও ছবি ও গোপনে তুলে আনেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে রুহিন সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১২ এপ্রিল একটি অভিযোগ দায়ের করেন (নং ২৩২/২০২৩)।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোতোয়ালী মডেল থানার সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রিপন গত ১৮ এপ্রিল দিবাগত গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সুমন ও ফাহিমকে গ্রেফতার করেন।

এ সময় তাদের সাথে থাকা সিলেট থ ১২-৫২৮২ নম্বর অটোরিক্সা (চেসিস নম্বরবিহীন) উদ্ধার করেন। সেদিনই ভোরের দিকে অভিযান চালিয়ে শাহী ঈদগাহ থেকে সিলেট থ ১২-৪৮০৩ নম্বর আরেকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে আরও বেশ কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র ও উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চোরাই অটোরিকশা সংগ্রহের পর রঙ ও ইঞ্জিন চেসিস নম্বর পরিবর্তন ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রি ও ভাড়া দেয়।

জানা গেছে, সুমন ফাহিমের মতো সিলেটে আরও অন্তত অর্ধশত সিএনজি অটোরিকশা চোর সক্রিয়। তাদের কাছ থেকে অটোরিকশা কিনে প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। চোরাই অটোরিকশা গুলোতে ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলো প্রকৃতপক্ষে বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করা হয়নি। বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই ও নম্বরবিহীন অটোরিকশা সংগ্রহের পর বিআরটিএর বাতিল করা রেজিস্ট্রেশন নম্বরও সংগ্রহ করে তারা। তারপর জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুলোর সঙ্গে মিল রেখে জাল ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে ভূয়া ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর খোদাই করে বসিয়ে তাদের প্রতারণা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালী থানার এসআই রিপন বলেন, আমি দুটি গাড়ি আটক করেছি এবং প্রতারণায় অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেফতারও করেছি। অটোরিকশাগুলোর নম্বর যাচাই করা হচ্ছে।তাছাড়াও তাদের নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সিএনজি নামে বে নামে সিলেট নগরী সহ বিভিন্ন জায়াগায় চলছে।বাকি সিএনজি গুলো ধরতে পুলিশ অভিযান তৎপর রয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *