স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩টি পদে প্রতিদ্বন্দিকারী ১৯জন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা সম্পন্ন হওয়ায় পর বুধবার (৮মে) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। এরপর ফলাফল ঘোষণাতেই যেনো অপেক্ষা করছিল চরম নাটকীয়তা। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের ‘নোয়ারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইটিং কর্মকতা ও দেওকলস দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেনকে নিয়েই ওই নাটকীয়তার সূত্রপাত। ওই প্রিজাইটিং কর্মকর্তার রহস্যজনক কর্মকান্ডে বুধবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত আটকে ছিলো বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স তথা পৌর শহরে বিরাজ করছিলো চরম উত্তেজনা।
অবশেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নির্বাচনের চ‚ড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটাণিং কর্মকর্তা স্বর্ণালী চক্রবর্তী। এরপূর্বে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ‘নোয়ারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইটিং কর্মকতা বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ‘আনারস’ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ ও ‘দোয়াত কলম’ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সেবুল মিয়া।
পৃথক লিখিত অভিযোগে দুই প্রার্থী উল্লেখ করেছেন, কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের ভোট পূণগনণা ও পুনঃনির্বাচনের দাবী রাখেন। এছাড়া ‘নোয়ারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইটিং কর্মকতা বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টেদের স্বাক্ষর না নেওয়া, প্রার্থীদের ফলাফল সিট না দেওয়া, মোট কাস্টিং (১ হাজার ৩৮৬টি) ভোটের সাথে ৫২৬ ভোটের ব্যবধান দেখিয়ে সহকারী রিটাণিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া ফলাফল (কাস্ট ৮৬০টি ভোট) সিটের মিল নেই বলে অভিযোগ করেছেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ‘চেয়ারম্যান’ পদে ‘কাপ-পিরিচ’ প্রতীকে ১৩ হাজার ৩২২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি (বহিস্কৃত) প্রবাসী সুহেল আহমদ চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ‘আনারস’ প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন ১২ হাজার ৯৬৮ ভোট।
এছাড়া চেয়ারম্যান পদের অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিস্কৃত) প্রবাসী সেবুল মিয়া পেয়েছেন ১১ হাজার ৬৯৯ ভোট, ‘টেলিফোন’ প্রতীকে পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আলতাব হোসেন পেয়েছেন ৮ হাজার ৭০৩ ভোট, ‘কৈ মাছ’ প্রতীকে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক (বহিস্কৃত) প্রবাসী গৌছ খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৮৮ ভোট, ‘শালিক’ প্রতীকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও যুবলীগের সহ সভাপতি প্রবাসী শমসাদুর রহমান রাহিন পেয়েছেন ২ হাজার ১৫০ ভোট, ‘ঘোড়া’ প্রতীকে বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও যুক্তরাজ্যের ডরসেট আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবাসী আব্দুল রোশন চেরাগ আলী পেয়েছেন ১ হাজার ৬৪৪ ভোট, ‘মোটর সাইলেক’ প্রতীকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ এস আলী এনামুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৯৪১ ভোট, ‘উট’ প্রতীকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন পেয়েছেন ৫১৮ ভোট, ‘হেলিকপ্টার’ প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি প্রবাসী আকদ্দুছ আলী পেয়েছেন ৪০৩ ভোট।
‘মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান’ পদে ‘কলস’ প্রতীকে ২৩ হাজার ৬৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার করিমা বেগম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ‘ফুটবল’ প্রতীকে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলিয়া বেগম পেয়েছেন ১৮ হাজার ১৫৬ ভোট এবং অপর প্রার্থী ‘প্রজাপতি’ প্রতীকে উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক (বহিস্কৃত) বেগম স্বপ্না শাহীন পেয়েছেন ১৫ হাজার ৩৪২ ভোট।
‘ভাইস চেয়ারম্যান’ পদে ‘মাইক’ প্রতীকে ১৬ হাজার ৯৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা যুবলীগ নেতা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মুহিবুর রহমান সুইট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ‘বই’ প্রতীকে উপজেলা আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ’র সদস্য ইসলাম উদ্দিন পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫১২ ভোট। অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ‘চশমা’ প্রতীকে খাজাঞ্চী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিস্কৃত) আব্দুর রব সরকার পেয়েছেন ১১ হাজার ৪০ ভোট, ‘টিউবওয়েল’ প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ পেয়েছেন ৮ হাজার ৩০৫ ভোট, ‘তালা’ প্রতীকে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক (বহিস্কৃত) কাওছার খান পেয়েছেন ৪ হাজার ৩২৯ ভোট, ‘টিয়া পাখি’ প্রতীকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পার্থ সারথি দাশ পাপ্পু পেয়েছেন ৩ হাজার ৭১৮ ভোট।